Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Dragon fruit

Dragon fruits: বিদেশি কুমড়ো, ড্রাগন ফ্রুট চাষ করে সফল কৃষ্ণা

দু’বিঘা জমি রয়েছে কৃষ্ণা ও তাঁর স্বামী অমিতাভর। সাত মাস আগে সেই জমিতে মালটা এবং ড্রাগন ফ্রুট চাষ শুরু করেন কৃষ্ণাদেবী।

কৃষ্ণা নন্দীঘোষ। নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণা নন্দীঘোষ। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২১ ০৮:০৭
Share: Save:

একই জমিতে ফলছে দু’টি ফল ও একটি আনাজ। কৃষক পঁয়ত্রিশ পেরনো এক মহিলা। রয়েছে ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। গতানুগতিক কৃষিকাজের দিকে না ঝুঁকে বিকল্প চাষে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর মাধাইপুর গ্রামের কৃষ্ণা নন্দীঘোষ। তাঁর উদ্যোগ নজর কেড়েছে কৃষি দফতরের কর্তাদের। তাঁর ‘সাফল্যের কাহিনী’ জেলা জুড়ে প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছেন ‘আতমা’ প্রকল্পের আধিকারিকেরা।

দু’বিঘা জমি রয়েছে কৃষ্ণা ও তাঁর স্বামী অমিতাভর। সাত মাস আগে সেই জমিতে মালটা এবং ড্রাগন ফ্রুট চাষ শুরু করেন কৃষ্ণাদেবী। এই প্রথম চাষে হাত দিয়েছেন তিনি। কৃষ্ণাদেবী জানান, ‘আতমা’ প্রকল্পের আধিকারিকদের পরামর্শ মতো ওই জমিতেই শুরু করেছেন তাইল্যান্ডের কুমড়ো চাষ। কৃষ্ণা বলেন, ‘‘মহিলাদের চাষে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে সরকার। সে উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছি।’’ তাঁকে দেখে আরও অনেকে বিকল্প চাষে আগ্রহী হবে বলে আশাবাদী কৃষি দফতর।

‘আতমা’ প্রকল্পের ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘একই জমিতে একই সময়ে তিন ধরনের ফসল চাষ করে কৃষ্ণাদেবী যে সাফল্য পেয়েছেন, তা জেলা জুড়ে প্রচার করা হবে।’’ কষি দফতরের আর এক কর্তার কথায়, ‘‘কৃষিতে এগিয়ে থাকা পূর্ব বর্ধমানে এখনও মহিলারা সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে তেমন ভাবে যুক্ত নন। সে দিক থেকে দেখলে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই মহিলার উদ্যোগ ব্যতিক্রমী।’’

কৃষ্ণাদেবী জানান, মালটা ফলের চাষ বেশ লাভজনক বলে তিনি শুনেছিলেন। তাই মাস সাতেক আগে তিনি জমিতে ফলের চারা পুঁতেছিলেন। কৃষক পরিবারের সদস্যা হওয়ায় কৃষ্ণাদেবী কৃষিকাজে উৎসাহী ছিলেন। নিজেই বিকল্প চাষ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন অমিতাভ। তিনি নিজেও এক জন চাষি। নিজেই তার পরে তিনি দেখা করেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ‘আতমা’ প্রকল্পের আধিকারিকদের সঙ্গে। আধিকারিকদের জানান, বিকল্প চাষকে হাতিয়ার করে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হতে চান তিনি। তাঁরাও কৃষ্ণাদেবীকে ‘পাশে থাকার’ আশ্বাস দেন।

কৃষ্ণাদেবী জানান, ‘আতমা’ প্রকল্পের আধিকারিকেরা তাঁর জমি পরিদর্শনে আসেন। মালটার চারার ফাঁকে ফাঁকে লাভজনক ড্রাগন ফ্রুট-এর চারা বসানোর পরামর্শ দেন তাঁকে। কৃষ্ণাদেবীকে তাঁরা এ-ও জানান, মালটা এবং ড্রাগন ফ্রুট-এর চারা বড় হওয়ার আগে, ওই জমিতেই তাইল্যান্ডের কুমড়ো চাষ করা যাবে। তাঁকে ড্রাগন ফ্রুট-এর চারা এবং সারের মতো চাষের অন্য উপকরণ দিয়েও সাহায্য করা হয়। তার পরেই কৃষ্ণাদেবী ওই জমিতে ড্রাগন ফ্রুট ও তাইল্যান্ডের কুমড়ো চাষ শুরু করেন। কৃষি আধিকারিকদের পরামর্শ মেনে চাষ করছেন তিনি। কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই জমি থেকে ছয় কুইন্টাল কুমড়ো বিক্রি করেছি।’’

সম্প্রতি কৃষ্ণাদেবীর জমি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন ‘আতমা’ প্রকল্পের সহকারী টেকনোলজি ম্যানেজার নিবিড় মজুমদার এবং সন্দীপবাবু। তাঁদের কৃষ্ণাদেবী দেখান, কী ভাবে ওই জমিতে ৪৬০টি মালটা এবং ২০০টি ড্রাগন ফ্রুট-এর চারা বেড়ে উঠেছে। কয়েকমাসের মধ্যে মিলবে ফল। ‘আতমা’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের দাবি, বাজারে একটি মালটা ফলের দাম ২০ টাকা। কেজি প্রতি ড্রাগন ফ্রুট বিক্রি হয় ২৫০- ৩০০ টাকায়। ঠিকমতো চাষ করতে পারলে ভাল টাকা উপার্জন হবে কৃষ্ণাদেবীর।

নিবিড়বাবু বলেন, ‘‘জমিতে খুব ভাল মালটা এবং ড্রাগন ফ্রুট-এর গাছ তৈরি করেছেন কৃষ্ণাদেবী। তাতে ভাল পরিমাণ ফল মিলবে। কৃষ্ণাদেবীর সাফল্যে অন্যেরাও উৎসাহিত হবেন।’’ কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘স্বামী সব সময় উৎসাহিত করেছেন। চাষে তিনিও সময় দিয়েছেন। আশা করছি, বিকল্প চাষ থেকে ভাল টাকা ঘরে আসবে।’’ তাঁর স্বামী বলেন, ‘‘যতটা পারি উৎসাহ দিই। ও নিশ্চয়ই আরও সাফল্য পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

agriculture Farming Dragon fruit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE