অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরেই লেখাপড়ার জগতকে বিদায় জানিয়ে সংসার জীবনে ঢুকতে হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনার ইচ্ছাটা মরতে দেননি। সেই ইচ্ছাশক্তির জেরেই ফের পড়াশোনার জগতে ফিরেছিলেন। তার পরে ছেলের সঙ্গে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এ বার ছেলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক (ফাজিল) উত্তীর্ণ হলেন বর্ধমান সদর ২ ব্লকের ঘাটশিলা গ্রামের বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের আয়েষা বেগম। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ২৮৭। ছেলে পারভেজ পেয়েছে ৩৫২। মা-ছেলে, দু’জনই পরীক্ষা দেন ভাস্তারা হাই মাদ্রাসা থেকে।
এখানেই থামতে চান না আয়েসা। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘গোবিন্দপুর বা মেমারি কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলে বয়স কখনও বাধা হয় না। আশা
করি কলেজে ভর্তি হতে পারব।’’ কী বার্তা দিতে চান? আয়েসা বলেন, ‘‘শিক্ষিত মায়ের সন্তান কখনও অশিক্ষিত হয় না।’’ আয়েষার মেয়ে ফিরদৌসি খাতুন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেছেন। তাঁর কাছেই লেখাপড়া করেছেন আয়েসা
ও পারভেজ।
গ্রামেই একটি মুদিখানার গুমটি রয়েছে আয়েষার স্বামীর। আয়েসা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী। স্বামী-স্ত্রীর অল্প আয়ে কোনওরকমে চলে
সংসার। আয়েষা বলেন, ‘‘গৃহশিক্ষক রাখার আর্থিক ক্ষমতা আমাদের নেই। মেয়েই আমাদের পড়িয়েছে। ওর পরামর্শ আর পথ প্রদর্শনেই আমরা এগিয়েছি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে পড়াশোনা করতে
হবে ভেবে লজ্জা হত। কিন্তু ছেলে ও মেয়ে উৎসাহ জোগানোয় কিছু
দিনের মধ্যেই তা কেটে যায়। ছেলে বলেছিল ‘মা তুমি পারবে’। ফলে অসুবিধা হয়নি। ছেলে পাশে থাকায় সাহস পেয়েছি।’’
মায়ের সাফল্যে গর্বিত মেয়েও। ফিরদৌসি বলেন, ‘‘মা আমাদের কাছে আদর্শ হয়ে থাকবে। এই সাফল্যে অনেককেই উৎসাহ জোগাবে। ইচ্ছা না থাকলেও অনেক মহিলাকেই সংসারের চাপে পড়াশোনা ছাড়তে হয়। তাঁদের বলব, হাল ছাড়বেন না। যে কোনও বয়সে লোখাপড়ার জগতে ফেরা যায়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)