Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩

‘নাতনি’র স্নেহেই আশ্রয় দম্পতির

অভিযোগ, দম্পতির মেয়ে বাবা-মাকে না জানিয়েই সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কার্তিকবাবু, সুমিত্রাদেবী বলছেন, “মেয়ের কাছে ফিরব না। এই স্টেশনেই নাতনিকে পেয়েছি।”

সম্বল: দম্পতির সঙ্গে দিব্যা। ভাতার স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

সম্বল: দম্পতির সঙ্গে দিব্যা। ভাতার স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
ভাতার শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

মাত্র বাইশ বছর বয়স। এমবিএ করছেন। পরিবার স্বচ্ছল। কী দরকার তাঁর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর! ভাতারের তরুণী দিব্যা সাঁই কিন্তু যা করছেন, মন থেকেই করছেন।

Advertisement

কী করছেন?

বর্ধমানের বাদামতলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কর্মরত ওই তরুণী রোজ ভাতার থেকে বর্ধমান শহরে ট্রেনে যাতায়াত করেন। যাতায়াতের পথে ভাতার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নেওয়া অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির ভালমন্দের দিকে খেয়াল রাখেন মন দিয়ে। দিব্যার আত্মীয়েরাও সপ্তাহান্তে দম্পতিকে দেখতে আসেন।

এই ‘রুটিন’ চলছে গত দেড় মাস ধরে। দিব্যার কথায়, ‘‘কোনও দরকারে করি না। মনে হয়েছে ওঁদের পাশে থাকা দরকার। তাই নিজের মতো চেষ্টা করছি।’’ দিব্যাকে দেখে ট্রেন-যাত্রী থেকে স্টেশন চত্বরের ব্যবসায়ীরাও সাহায্য করছেন দম্পতিকে। শেখ আসগর, চম্পা শেখদের বক্তব্য, “ওর দেখাদেখি আমরাও মশারি দেওয়া থেকে নানা ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করি।” স্টেশনের পাশেই চায়ের দোকানদার রাজু শেখের কথায়, “এই মেয়েটার ‘দিল’ আছে। শুধু টাকা, জামা-কাপড় দেওয়া নয়। বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসা, এমনকী যাতায়াতের পথে বৃদ্ধ দম্পতির পাশে বসে গল্পও করে।”

Advertisement

অথচ এ রকম অবস্থা হওয়ার কথা ছিল না বৃদ্ধ দম্পতির। দুর্গাপুরের এমএমসিতে ঠিকাকর্মী ছিলেন কার্তিক পাল। স্ত্রী সুমিত্রাদেবীকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন। একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছেন। ২০০২ সালে ওই কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে পরিচারিকার কাজ করতে থাকেন সুমিত্রাদেবী। ‘আশ্রয়’ নেন দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার কাছে মেয়ের বাড়িতে। অভিযোগ, সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে কাটোয়ার কাছে চান্ডুলিতে দেশের বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। ঠাঁই হয়নি সেখানেও। এর পর থেকেই ঠিকানা ভাতারের প্ল্যাটফর্ম।

অভিযোগ, দম্পতির মেয়ে বাবা-মাকে না জানিয়েই সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কার্তিকবাবু, সুমিত্রাদেবী বলছেন, “মেয়ের কাছে ফিরব না। এই স্টেশনেই নাতনিকে পেয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.