Advertisement
২০ মে ২০২৪

তিন মাসে প্রসূতি মৃত্যু ২৬, প্রশ্ন

পরিসংখ্যানও বলছে, ২০১৭ সালে জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ১৩ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। আর ২০১৮ জানুয়ারি থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সেই সংখ্যা ২৬। রিপোর্ট দেখে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নজরদারির অভাব রয়েছে।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৫
Share: Save:

সন্তানের জন্ম দিতে ৩ এপ্রিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন হুগলির গোঘাটের শ্রাবণী পণ্ডিত। পরের দিন প্রসবের পরে অবস্থার অবনতি হয়। মারাও যান ওই মহিলা। তাঁর স্বামী বিশ্বজিবাবুর দাবি, বারবার বলার পরেও ডাক্তারেরা দেখেননি। নার্সরাও বাজে ব্যবহার করেন। তারই মাসুল দিতে হল। ৮ তারিখ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।

বীরভূমের আমুরি থেকে পেটে যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুবিনা বিবি। তাঁর স্বামী শেখ মুর আলিমের অভিযোগ, যন্ত্রণাকাতর স্ত্রীকে প্রসূতি বিভাগে নিয়ে গেলে তারা শল্য বিভাগে পাঠায়। তারাও ভর্তি নেয়নি। বহুক্ষণ ঘোরাঘুরির পরে জরুরি বিভাগ ইউএসজি করাতে বলে। এরপরেই মারা যান রুবিনা।

গত দু’মাসে এমন পাঁচটি অভিযোগ জমা পড়েছে বর্ধমান মেডিক্যালে। পরিসংখ্যানও বলছে, ২০১৭ সালে জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ১৩ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। আর ২০১৮ জানুয়ারি থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সেই সংখ্যা ২৬। রিপোর্ট দেখে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নজরদারির অভাব রয়েছে। ওই দফতরের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতি বিভাগের সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে একটি বৈঠক করা হয়েছে। আর যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে বা গাফিলতি না হয়, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবার বৈঠক ডাকা হবে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই দু’মাসে প্রায় দু’হাজার প্রসব হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যালে। বর্ধমান ছাড়া হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া এমনকী ঝাড়খণ্ডের একটা অংশ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। ওয়ার্ল্ড হেলথ অগার্নাইজেশনের মাপকাঠিতে প্রতি এক লক্ষে ১১৩ জন সদ্য প্রসূতী মারা যেতে পারেন। বর্ধমানে সেই হার অনেক বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা অনেক সময় দূরদূরান্ত থেকে ‘রেফার’ হয়ে প্রসূতীরা আসেন। যখন নিয়ে আসা হয় অনেক সময়েই তখন চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না। এই দাবি মেনে নেওয়া হলেও তিন মাসে ২৬ জন সদ্য মায়ের প্রাণ হারানোর ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে না স্বাস্ব্য কর্তারা।

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, দুটি ঘটনাতেই চিকিৎসরদের নজরদারির অভাব ছিল। তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, প্রসবের পরে যতটা নজর দেওয়ার কথা তা হয়নি। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক খাতায় কলমে থাকলেও হাসপাতালেও থাকেন না বলেও জানানো হয়েছে রিপোর্টে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে ১২টা সিসিইউ, ৬০০ সিইউ, এইচডিইউ রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পরে ঠিক থাকা সদ্য মায়েরাও হঠাৎই মারা যাচ্ছেন। আবার কোন বিভাগ চিকিৎসা করবে তা ঠিক করতেও সময় চলে যাচ্ছে। ডেপুটি সুপার অমিতাভ দাঁ শুধু বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। ’’প্রসূতি বিভাগের প্রধান শৌভিক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘হাসপাতালে এলে কথা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Pregnant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE