Advertisement
E-Paper

কাটোয়ার গীধেশ্বর মন্দিরে আর অচ্ছুত নন দাসেরা! প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সাড়ে ৩০০ বছরের ‘রাজ-রীতি’র বদল ঘটল

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় গীধেশ্বরের আরাধনা শুরু হয় প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে। জমিদারদের হাত ধরে পুজোর প্রচলন। কিন্তু এত দিন দাস সম্প্রদায় ওই মন্দিরে পুজো দিতে পারেননি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ২২:৩১
বদলে গেল রীতি। কাটোয়ার গীধগ্রামের মন্দিরে পুজো দেওয়া নিয়ে বিতর্কের ইতি।

বদলে গেল রীতি। কাটোয়ার গীধগ্রামের মন্দিরে পুজো দেওয়া নিয়ে বিতর্কের ইতি। —ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ বৈঠক এবং আলোচনায় অবশেষে জট কাটল। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রামের গীধেশ্বর মন্দিরে অন্যদের মতো পুজো দিতে যেতে পারবেন দাস সম্প্রদায়ের সদস্যেরা।

রীতি বদলে শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে চেয়েছিলেন গীধগ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দারা। সেই নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। অভিযোগ, মন্দিরে উঠতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ দাস সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের একঘরে করে রাখার প্রক্রিয়া শুরু করেন মাতব্বরেরা। দলিতদের অস্পৃশ্য হিসাবে দূরে রাখার নানা ঘটনার কথা উঠে আসে উত্তর ভারত থেকে। কিন্তু সেই ‘সংস্কৃতি’ কী ভাবে বাংলায় এল, তাই নিয়ে শুরু হয় চর্চা। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই মীমাংসায় উদ্যোগী হয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে কাটোয়ার মহকুমাশাসক বৈঠক ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা এবং পুলিশ। বৈঠকে অংশ নেন গীধেশ্বর মন্দির কমিটি এবং দাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনার শেষে কাটোয়ার মহকুমাশাসক অহিংসা জৈন বলেন, ‘‘গীধগ্রামে মন্দিরে পুজো দেওয়া নিয়ে যে সমস্যা ছিল, তা মিটে গিয়েছে। ওই গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দারাও অন্যদের মতো পুজো দিতে পারবেন। আগামী বুধবার থেকে সকলেই পুজো দেবেন মন্দিরে। এই সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে নিয়েছেন।’’

কাটোয়ায় গীধেশ্বরের আরাধনা শুরু হয় প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে। তৎকালীন জমিদারদের হাত ধরে ওই পুজোর প্রচলন। জানা যায়, প্রথম থেকে গ্রামের দাস সম্প্রদায়ের মানুষদের ওই মন্দিরে পুজো দেওয়া ছিল ‘নিষিদ্ধ’। সেই নিয়ম বা রীতি চলে এসেছে বছরের পর বছর। বিতর্কের শুরু চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রির দিন। মহাদেবের পুজো দেবেন বলে ঠিক করেন দাস সম্প্রদায়ের ১৩০টি বাড়ির বাসিন্দারা। আসে বাধা। দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় অশান্তি বাধে। উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে। খবর পেয়ে মন্দির চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। কিন্তু বিতর্ক এবং বিবাদের সমাপ্তি হয়নি। গ্রামের একাংশের দাবি, পূর্বপুরুষের নিয়মানুসারে দাস সম্প্রদায়ের মানুষদের মন্দিরে পুজো দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। সেটাই জারি থাকবে। রুখে দাঁড়ান দাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। তাঁরা প্রাচীন ‘রীতি’র অবসান ঘটাতে চান।

ওই বিতর্কে মন্দিরের সেবায়েত বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দাস বাদে বাকি সবাই পুজো দিলেও নিজেদের পুজো দেওয়ার অধিকার এই মন্দিরে কারও নেই। যাঁরা পুজো দেন, তাঁরা নৈবেদ্য এনে মন্দিরে রাখেন। ব্রাহ্মণেরাই তা মহাদেবকে অর্পণ করেন। সেই রীতিই চলে আসছে।’’ তিনি আরও জানান, মন্দিরের সেবায়েত ব্রাহ্মণ অর্থাৎ তৎকালীন জমিদার যে ব্রাহ্মণ পরিবারকে ‘বাবা’র পুজোর ভার দিয়ে গিয়েছেন, কেবল তাঁরাই শিবলিঙ্গে দুধ, জল ঢালতে পারেন। বাইরের কোনও ব্রাহ্মণেরও সেখানে পুজো দেওয়ার অধিকার নেই। অন্য দিকে, দাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন করেন, একই গ্রামের বাসিন্দা হয়ে তাঁরা কেন এত দিন অস্পৃশ্য হয়ে থাকবেন?

এই বিতর্কের মাঝে মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল গীধগ্রামে যায়। তাঁরা জানান, পুরোনো রীতিও মানতে হবে এবং সংবিধানকেও মান্যতা দিতে হবে। গীধগ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিবমন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত। বার বার চেষ্টা করেও পুজো দিতে পারেননি। তাঁদের অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্দিরে যাতে তাঁরাও পুজো দেওয়ার অধিকার পান, সেই দাবিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে বিতর্কের সমাধান হল। বদলাল সাড়ে তিনশো বছর আগের ‘রাজ-রীতি’।

Shiva temple Ancient Shiva Temple Custom
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy