E-Paper

দুই সভাপতিকে নিয়ে ক্ষোভের আঁচ বিজেপিতে

বর্ধমান-দুর্গাপুর জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ, মুষ্টিমেয় কয়েক জনকে নিয়ে দল চালানো হচ্ছে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী, সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

লোকসভা ভোটে এলাকায় দলের ফল আশানুরূপ হয়নি। তার পর থেকে দলের মধ্যে তাঁদের নিয়ে কানাঘুষো নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার বেশ কিছু দলের রাজ্য নেতাদের কানেও পৌঁছেছে বলে খবর। পশ্চিম বর্ধমানে বিজেপির যে দুই সাংগঠনিক জেলা রয়েছে, দু’টিরই সভাপতি তাই দলের অন্দরে কিছুটা ‘চাপে’ রয়েছেন বলে বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি।

গত লোকসভা ভোটে বর্ধমান-দুর্গাপুর ও আসানসোল— দুই আসনেই তৃণমূলের কাছে বিজেপির বড় হারের পরে দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা ও বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে দলের নিচুতলার একাংশের কাছে। দল সূত্রের খবর, তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও উঠছে।

বর্ধমান-দুর্গাপুর জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ, মুষ্টিমেয় কয়েক জনকে নিয়ে দল চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য যে বরাদ্দ হচ্ছে, তার উপযুক্ত খরচ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কর্মীরা আক্রান্ত হলে জেলা নেতৃত্বকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। খাতায়-কলমে সংগঠন থাকলেও, বাস্তবে তার ধারেকাছে নেই পরিস্থিতি। রাস্তায় নেমে আন্দোলনের ক্ষেত্রে অভিজিৎ-সহ জেলা নেতৃত্ব উদ্যোগী নন বলেও অভিযোগ অনেকের।

একই ধরনের নানা অভিযোগ রয়েছে আসানসোলের বিজেপি জেলা সভাপতি বাপ্পার বিরুদ্ধেও। দল সূত্রের খবর, কয়েক মাস ধরে আসানসোল পুরসভার চার জন বিজেপি কাউন্সিলরকে জেলার দলীয় বৈঠকে থাকেন না। দলের জেলার সহ-সভাপতি অভিজিৎ আচার্য-সহ কয়েক জন পদাধিকারীও অনুপস্থিত থাকেন। অভিজিতের দাবি, ‘‘রাজ্য স্তরের কোনও নেতা এলে ডাকা হয়। এ ছাড়া জেলার বৈঠকে ৬ মাসের বেশি সময় ডাকা হয়নি, তাই যাইনি।’’

বিজেপি প্রভাবিত একটি গণ সংগঠনের জেলা সভাপতি দাবি করেন, অক্টোবরে তিনি নিজের চেষ্টায় দলের সদস্য‌ সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছিলেন। এর পরে দলের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে কারণ দর্শাতে বলায়, তিনি আর‌ দলীয় সভায় যাচ্ছেন না।‌‌ দলের আর এক নেতার দাবি, সর্বসাকুল্যে জেলায় ৮৫ হাজার সদস্য সংগ্রহ হয়েছে। আগে এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ ছিল। জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ ও বারাবনিতে সংগঠনের হাল ভাল নয়। গত লোকসভা ভোটের ফলও তার প্রমাণ। ওই সমস্ত এলাকা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দলের অনেক কর্মী লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বলেও দাবি।

ওই সব এলাকার অনেক কর্মীর দাবি, জেলা সভাপতিকে আসানসোল ও হিরাপুর ছাড়া অন্য কোথাও কার্যত দেখা যায় না। আক্রান্ত কর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোয় অনেকে নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন। ইতিমধ্যে জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর ও রানিগঞ্জে মণ্ডল কমিটিগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। এই সব এলাকায় দলের আন্দোলন কার্যত দেখা যায় না। আরও অভিযোগ, সদস্য সংগ্রহে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজে নামানোই হয়নি।

বিজেপি সূত্রের খবর, দলের দুই নেতানেত্রীকে জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, বারাবনি ও পাণ্ডবেশ্বরে পৃথক ভাবে নানা কর্মসূচি নিতে দেখা গেলেও, সেখানে জেলা সভাপতিকে প্রায় দেখা যায় না। অবৈধ বালি, কয়লা বা লোহা কারবার নিয়ে অন্য নেতানেত্রীরা সরব হলেও, বাপ্পাকে এখনও তেমন কোনও আন্দোলনে দেখা যায়নি বলেও দাবি।

বাপ্পা যদিও এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দল যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, তার থেকে বেশি হয়ে এক লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাতে গাত্রদাহ হওয়ায়, তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ হয়েও বিজেপিতে আছেন যে সব লোকজন, তাঁরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। দলের প্রকৃত কর্মীরা কেউ বলছেন না।‌’’ অভিজিৎও দাবি করেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কারও ক্ষোভ নেই। বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত ভোটে পর্যন্ত আক্রান্ত কর্মীদের বাড়ি গিয়েছি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সদস্য সংগ্রহও করেছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy