Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জন্মের নথি জমা দিলে তবেই বিয়ে

শিবিরে এলাকায় কমবয়সে বিয়ের প্রচলন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথাও উঠে আসে। নসরতপুর সিদ্ধেশ্বরী পাড়া মসজিদের ইমাম শেখ গোলাম মোস্তাফা জানান, গ্রামেগঞ্জে অনেক সময়েই বাসিন্দাদের চাপে ইচ্ছে থাকলেও বিয়ে আটকানো যায় না।

তখনও চলছে শিবির। নিজস্ব চিত্র

তখনও চলছে শিবির। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ১৩:১৯
Share: Save:

নাবালিকা বিয়ে রুখতে নাপিত, পুরোহিত, ইমামদের কাজে লাগাতে চেয়েছিল প্রশাসন। সেই মতো তাঁদের নিয়ে শিবিরও হয়ে গেল পূর্বস্থলীর নজরুল মঞ্চে। বৃহস্পতিবার ওই শিবিরে এলাকার প্রায় দু’শো জন নাপিত, পুরোহিত, মসজিদের ইমাম, ডেকরেটর ব্যবসায়ী, কন্যাশ্রী সদস্য, সিভিক ভলান্টিয়ার, গ্রামীণ পুলিশ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের ডাকা হয়। প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁরা অঙ্গীকার করেন, পাত্রী বা পাত্রের বয়সের শংসাপত্র দেখার পরেই বিয়ের কাজ নেবেন তাঁরা। বৈঠকে হাজির পূর্বস্থলীর দক্ষিণের বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। সমস্যার শিকড়ে পৌঁছে কাজ হচ্ছে। পাশে আছি।’’

শিবিরে এলাকায় কমবয়সে বিয়ের প্রচলন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথাও উঠে আসে। নসরতপুর সিদ্ধেশ্বরী পাড়া মসজিদের ইমাম শেখ গোলাম মোস্তাফা জানান, গ্রামেগঞ্জে অনেক সময়েই বাসিন্দাদের চাপে ইচ্ছে থাকলেও বিয়ে আটকানো যায় না। প্রশাসন পাশে থাকলে তা পারা যাবে। পূর্বস্থলী ১-এর বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় তাঁকে আশ্বাস দেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে আমাদের জানাবেন। আমরা মানুষকে বোঝাব।’’ পুরোহিত অরুণ ত্রিবেদী আবার বলেন, ‘‘অনেকে সমস্ত তোড়জোড় করে মন্দিরে আসেন বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। প্রশাসন নাবালিকা বিয়ে আইনত নিষিদ্ধ বলে কোনও নথি দিলে তা আমরা মন্দিরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পারি। তাহলে মানুষকে বোঝাতে সুবিধে হয়।’’ তাঁকেও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন বিডিও। শিবিরে কমবয়সে বিয়ে হলে শরীরে ও মনে তাঁর কী প্রভাব পড়ে তা বোঝানো হয় সবাইকে। শুধু পাত্রী বা পাত্রের পরিবার নয় বাল্যবিবাহে প্রত্যক্ষ ভাবে সামিল থাকলেই তাঁরা অপরাধী বলে জানানো হয়। নাদনঘাটের ওসি মিঠুন ঘোষ জানান, গত দু’মাসে ১৯টা বিয়ে রোখা হয়েছে। তবে পুলিশ কোনও মামলা দায়ের করেনি। মানবিক ভাবে বোঝানো চেষ্টা করা হয়েছে। তবে নাবালিকা বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দু’বছর কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে বলেও জানান তিনি। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক, পঞ্চায়েত প্রধানদের প্রত্যেক সংসদে একটা করে সচেতনতা মূলক সভা করার নির্দেশ দেন।

এ দিনের অনু্ষ্ঠানে নাবালিকা বিয়ে রোখায় বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার জন্য দোগাছিয়ার বাসিন্দা, ভিলেজ পুলিশ সুজিত দে-কে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি জানান, বেশির ভাগ সময়েই গ্রামের মানুষের ক্ষোভ, প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। অনেকে বিশেষ কোনও দলের লোক এটা করাচ্ছে বলেও মনে করেন। সুরাহায় সর্বদলীয় বৈঠক করার পরামর্শ দেন তিনি। বিডিও পুষ্পেনবাবু জানান, বিয়ে ভাঙতে গিয়ে ভাল পাত্র পাওয়া, পণ ছাড়া বিয়ে দেওয়া অসম্ভব বলে শুনতে হয় তাঁদের। কিন্তু অভিভাবকদের মনে রাখা উচিত, অল্প বয়সে সন্তানের জন্ম দিলে মায়ের প্রাণের ঝুঁকিও থাকতে পারে। বরং পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলে ওই কিশোরীর জীবন অনেক সুখের হবে বলেও ভরসা দেন তিনি। শিবির শেষে সবার অঙ্গীকার, ‘‘পাত্রীর জন্মের শংসাপত্র না পেলে বিয়ের কাজ নেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor marriage awareness program Communal harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE