সরাসরি রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু বর্ধমানের ত়ৃণমূল রাজনীতিতে তাঁর দু’জন অনেক দিন থেকেই ‘কাকা-ভাইপো’ নামে পরিচিত। একদা ছিলেন ‘হরিহরআত্মা’। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাঁদের দূরত্ব বেড়েছে। এ বার ‘কাকা’র আয়োজিত গণবিবাহের দিনেই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল প্রদর্শনী ডার্বি ম্যাচের আয়োজন করেছেন ‘ভাইপো’। ‘কাকা’ হলেন, দক্ষিণ বর্ধমানের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস। আর ‘ভাইপো’ জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসবিহারী হালদার।
শহরবাসীর একাংশ মনে করছেন, ‘কাকা-ভাইপোর’ জোড়া কর্মসূচি ঘিকে শুক্রবার উত্তেজনার আঁচ পোহাবে বর্ধমান। এক দিকে, খোকনের উদ্যোগে গণ বিবাহের আসর বসবে শহরে একপ্রান্তে। আর শহরের অন্যপ্রান্তে তখন চলবে ডার্বির সাজো সাজো রব। সীতাভোগ-মিহিদানার গরম উনুনের আঁচ শীতের দুপুরে ছড়িয়ে পড়বে নাগরিক সমাজে।
শুক্রবার দুপুরে বিধায়ক খোকনের উদ্যোগে বর্ধমানের কঙ্কালেশ্বরী মাঠে বসছে গণবিবাহের আসর। আর ওই সময়েই বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের মাঠে শুরু হবে মোহন বাগান-ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রদর্শনী ম্যাচ। দুই মেগা ইভেন্টকে ঘিরেই শহরে পারদ বেশ ঊর্ধ্বমুখী। খোকন জানিয়েছেন, ১৯ জন ভিন্রাজ্যের কনের বিয়ে হবে শুক্রবার গণবিবাহের আসরে। মোট কনের সংখ্য এ বার ১২৫। ১২ বছর আগে খোকনের উদ্যোগে এই গণবিবাহ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। যখন শুরু হয় তখন তিনি ছিলেন কাউন্সিলর। ২০২১-এ বিধায়ক হওয়ার পরেও সেই ধারা বজায় রেখেছেন। এখনও বর-কনের উপহারের সামগ্রী নিজেই বাছাই করেন। এতে থাকে সাইকেল, সেলাই মেশিন, সোনার গয়না থেকে বিয়ের প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী। এমনকি, সংসার চালাবার মত বাসনকোসন এবং কিছু খাদ্যসামগ্রীও দেওয়া হয় নবদম্পতিকে।
বর এবং কনেপক্ষের ভোজসভার ব্যবস্থাও থাকে। এ বার ৩০ রকমের বাজনা বাজিয়ে পাত্রেরা শোভাযাত্রা করে বিয়ে করতে আসবেন বলে জানান বিধায়ক খোকন। তিনি জানান, এ বার ২৫ জন আদিবাসী, ৮ জন মুসলিম, ২৬ জন অবাঙালি এবং দু’জন মতুয়া সম্প্রদায়ের কনে গণবিবাহে অংশ নেবেন। যে যার ধর্মীয় প্রথা এবং রীতি মেনেই এ খানে বিয়ে করবেন। তিনি বলেন, ‘‘গত ১২ বছরে এক হাজারেরও বেশি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল এখানে।’’
অন্য দিকে, জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি রাসবিহারী বলেন, ‘‘মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলারেরা এই প্রীতি ম্যাচে অংশ নেবেন। খেলায় কোন টিকিট নেই। প্রবেশ অবাধ। বেশ কয়েক জন বিদেশি ফুটবলারকেও ডার্বিতে দেখা যাবে। শহরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘কাকা-ভাইপোর দ্বন্দ্ব এখন সুবিদিত। সকলেই জানে। জেলা নেতৃত্ব থেকে রাজ্য পর্যন্তও।’’ তিনি জানান, মাস খানেক আগে খোকন-রাসবিহারীর সেই দ্বন্দ্ব কার্যত সামনাসামনি চলে আসে দলীয় কার্যালয়ে একটি সভায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। জেলা স্তরের সাংগঠনিক পর্যালোচনা সংক্রান্ত ওই বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল কাকা-ভাইপোর। একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছিলেন প্রকাশ্যে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ও একটি ভোটকুশলী সংস্থার প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল। তার পরে থেকেই বর্ধমানের রাজনীতিতে চর্চার কেন্দ্রে চলে আসে ‘দাস বনাম রাস’ (খোকন দাস বনাম রাসবিহারী) দ্বন্দ্ব।