Advertisement
১৯ মে ২০২৪

অভিযোগ বহু, ভোটও ৮৬ শতাংশ

সকাল থেকে ফাঁকাই ছিল ভোটের লাইন। তবে বেলা গড়াতেই উপচে পড়ল ভিড়। শাসক দলের দাবি, মাঠে ধান কাটার কাজ সেরে নাওয়া-খাওয়া করে বুথে এসেছেন ভোটারেরা। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, সকালে ভিড় না হলেও ১২টার মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। কী হয়েছে, বোঝা যাচ্ছে।

বুথের সামনে লাইন। মন্তেশ্বরের ইচু গ্রামে নিজস্ব চিত্র।

বুথের সামনে লাইন। মন্তেশ্বরের ইচু গ্রামে নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য
মেমারি ও মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫০
Share: Save:

সকাল থেকে ফাঁকাই ছিল ভোটের লাইন। তবে বেলা গড়াতেই উপচে পড়ল ভিড়। শাসক দলের দাবি, মাঠে ধান কাটার কাজ সেরে নাওয়া-খাওয়া করে বুথে এসেছেন ভোটারেরা। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, সকালে ভিড় না হলেও ১২টার মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। কী হয়েছে, বোঝা যাচ্ছে।

এ দিন ভোট শুরুর পরেই একের পরে এক বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ করতে শুরু করে বিজেপি। বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ পোদ্দারের অভিযোগ, ‘‘মেমারির বোহার ২ পঞ্চায়েতের বরা গ্রাম থেকে আমাদের এজেন্ট প্রদীপ জরকে অপহরণ করা হয়।’’ প্রদীপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী এ দিন অভিযোগে জানান, সকালে ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে মোটরবাইকে করে বুথের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। হাজরাপাড়া মোড়ে পৌঁছতেই ছ’-সাত জন দুষ্কৃতী তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা বাদে দেড়-দু’কিলোমিটার দূরের হরিশঙ্করপুর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও এলাকায় বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত পরিবারগুলিকে হুমকি এবং বুথ থেকে এজেন্টদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।

সন্ত্রাসের অভিযোগ করে বিকেল চারটে নাগাদ কংগ্রেস প্রার্থী বুলবুল আহমেদ শেখ প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানান এবং তা পর্যবেক্ষককের মোবাইলে এসএমএস করেন। তাঁর দাবি, ‘‘কোথাও ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। সাতগেছিয়া-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গাড়ি আটকে মারধরের চেষ্টা করা হয়েছে।’’ তবে এ ভাবে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করা যায় না বলে জানিয়েছেন ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনের কর্তারা।

ভোট দিয়ে মুড়ির প্যাকেট হাতে ফেরা। মেমারির বিজুরে। নিজস্ব চিত্র।

একদা যে দলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল মন্তেশ্বর, সেই সিপিএম এ দিনও শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, দু’দিন আগে থেকেই বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এজেন্টদের ফর্ম কেড়ে নেয় তৃণমূল। যাঁদের কাছ থেকে ফর্ম কাড়া সম্ভব হয়নি, ভোটের আগের রাতে তাঁদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত কয়েক দিন ধরেই পূর্বস্থলী, বর্ধমান সদর, কাটোয়া, মেমারি ও কালনা থেকে বহিরাগতদেরও জড়ো করা হয় বলে দাবি। হুমকির প্রতিবাদে শ্রীধরপুর গ্রামে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভও দেখান বলে সিপিএম সূত্রের খবর। সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক অশেষ কোনারের অভিযোগ, ‘‘আমাদের এজেন্টরা বুথে গিয়ে দেখন, তাঁদের জায়গায় তৃণমূলের লোক বসে রয়েছেন।’’ বেলা ১২টার মধ্যেই ২০৬টি বুথ থেকে এজেন্টদের ‘বিভিন্ন কায়দায়’ সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ ওসমান গণি সরকারের।

মন্তেশ্বর, মেমারির বহু বুথ থেকেই ভোটারদের ভোট দিয়ে মুড়ির প্যাকেট নিয়ে বেরোতে দেখা যায়। বিরোধীদের দাবি, ভোটারদের প্রভাবিত করতেই ফের বিধানসভা ভোটের মতো মুড়ি-ঘুগনির কৌশল নিয়েছে শাসক দল। যদিও তৃণমূলের দাবি, কর্মী-সমর্থকেরা ভোটের জন্য প্রচুর খাটাখাটনি করেছেন। তাঁদের জন্যও সামান্য আয়োজন ছিল। তবে অন্য কেউ এলেও ফেরানো হয়নি। তবে নোট-সঙ্কটের বাজারে অনেকটাই চেয়েচিন্তে খরচ করতে হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। সাতগেছিয়া বাজারে তৃণমূলের কর্মীরা জানান, একটি দোকানে চপ-ঘুগনির বরাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নগদে টাকা মেটানো নিয়ে সংশয় থাকায় রাতারাতি তাঁরা নিজেরাই চপ-বেগুনি তৈরি করে বুথে বুথে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

তৃণমূল নেতাদের দাবি, আশপাশে মুড়ি তৈরির কারখানা প্রচুর। সেখান থেকে ধারে ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্তেশ্বরের ফজলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের ‘স্লিপ’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বুথের গায়েই থাকা একটি অস্থায়ী দোকান থেকে পাউরুটি, কেক, কলা কিংবা চা-বিস্কুট খাচ্ছেন। সেখানকার তৃণমূল নেতা অরূপ কোনারের দাবি, “ধারেই খাওয়াতে হচ্ছে। ভোটারদের দাবি মেটাতে এ ছাড়া আর উপায় কী!” জাবুইডাঙা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বুথ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে তৃণমূলের শিবির। সেখান থেকে ভোটারদের হাতে মুড়ির প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। আবার বিজুর গ্রামে ভোটার দেওয়া হয়েছে মুড়ি-ঘুগনি। ভোটারদের যদিও দাবি, “হাল্কা শীতের সকালে মুড়ি-চপ বা ঘুগনি-মুড়ি খেতে ভালই লাগছে।” কিন্তু নগদের অভাব তো ব্যবসায়ীদেরও। তারপরেও ধারে দেওয়া যাচ্ছে? মেমারি ২ ব্লকের একটি মুদি দোকানের মালিক বলেন, ‘‘একে তো মহাজনকে টাকা দিতে পাচ্ছি না, তার উপর ধার। দেখি কবে টাকা পাই!’’

যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল। পাল্টা সিপিএমের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করে মেমারির তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইসমাইলের দাবি, ‘‘ভণ্ডুল গ্রামে আমাদের দু’জন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।’’ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথেরও দাবি, ‘‘বিরোধীরা এজেন্ট না দিতে পারলে আমরা কী করব। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি, লাইন ফাঁকা, অথচ ভোট পড়েছে বহু। বেশ কয়েকটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনির জওয়ানদেরও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। যদিও মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার দাবি, ‘‘মোট ৪৭টি অভিযোগ হয়েছি। তার মধ্যে বেশির ভাগ অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। কোথাও গোলমাল হয়নি।’’ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

by election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE