Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Old Age Home

বৃদ্ধাশ্রমেই ভাইফোঁটার ‘আনন্দলোক’ অঞ্জলিদের

বৃদ্ধাশ্রমটিতে ১১ জন পুরুষ ও ১৮ জন মহিলা আবাসিক রয়েছেন। বৃদ্ধাশ্রমের দাদা-ভাইদের তো বটেই, বাইরের অনেকেও এখানে ভাইফোঁটা নিতে এসেছিলেন।

খান্দরার বৃদ্ধাশ্রমে ভাইফোঁটা।

খান্দরার বৃদ্ধাশ্রমে ভাইফোঁটা। —নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Share: Save:

ওঁদের ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম। ভাইফোঁটার দিনটায় ওঁরা আর অতীত ঘাঁটেন না তেমন। বরং, বর্তমান নিয়েই বেঁচে থাকতে চান। হয়তো এমন ভাবনা থেকেই বুধবার খান্দরায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রমে ভাইফোঁটা উপলক্ষে দেখা গেল উৎসবের মেজাজ। এমন আয়োজনটার শুরু হয়েছিল ২০১৭-য়।

বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমটিতে ১১ জন পুরুষ ও ১৮ জন মহিলা আবাসিক রয়েছেন। বৃদ্ধাশ্রমের দাদা-ভাইদের তো বটেই, বাইরের অনেকেও এখানে ভাইফোঁটা নিতে এসেছিলেন। সে জন্য মঙ্গলবার থেকেই ছিল সাজো-সাজো রব, জানাচ্ছিলেন ৬৮ বছরের অঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৮ পর্যন্ত বাড়িতেই ফোঁটা দিতেন তিন ভাইকে। অঞ্জলিরা পাঁচ বোন। তিনি জানান, দুই মেয়ের বিয়ে এবং স্বামীর মৃত্যুর পরে আসানসোলের মুর্গাসোলের বাড়ি ছেড়ে ২০১৯-এ বৃদ্ধাশ্রমে এসেছেন। তিনি বলেন, “প্রথম দিকে বাড়ির ভাইফোঁটার কথা খুব মনে পড়ত। এখন আর সে সব আর তেমন মনে পড়ে না।
ভাইফোঁটার দিন আবৃত্তিও করি।”

রত্না বিশ্বাস। বয়স ৭২ বছর। আদিবাড়ি, আসানসোল দুর্গা মন্দির এলাকায়। তাঁরা এক ভাই ও এক বোন ছিলেন। ২০২১-এ করোনায় ভাইয়ের মৃত্যু হয়। রত্না বলেন, “ভাইকে ভুলতে পারব না কোনও দিন। কিন্তু এখন অনেক দাদা-ভাইদের ফোঁটা দিতে পেরে খুব খুশি।”

ভাইফোঁটা পেয়ে খুশি দাদা ও ভাইয়েরাও। আসানসোলের কোর্ট মোড়ে বাড়ি ৭৫ বছরের রমারঞ্জন রায়ের। ২০২১ থেকে বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। বলেন, “২৫ বছর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ছেলে মুম্বইয়ে থাকে। ভাইফোঁটার দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুব ভাল লেগেছে।” ছোট থেকেই তবলার তালিম রয়েছে রমারঞ্জনের। সে জন্য এখানে আসার পরেই তাঁকে তবলা উপহার দেওয়া হয়। এই বার ভজন পরিবেশন করেছেন তিনি।

বৃদ্ধাশ্রমটির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিকটি দেখেন লছমি বক্সী। তিনি জানান, বৃদ্ধাশ্রমের অনেকেই প্রতিভাবান। তাঁদের কাজ, সেটাকেই সামনে আনা। এ জন্য নিয়মিত মহড়াও হয়। পরিচালক সংস্থাটির সভাপতি প্রকাশ সরকার বলেন, “ভাইফোঁটায় আবাসিকদের সঙ্গে এলাকাবাসীর যোগদান দিনটিকে অন্য মাত্রা দেয়।”

ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানের শুরুতে শিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ আবাসিকেরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর...’। শুনতে-শুনতে এলাকাবাসীর যেন একটাই প্রার্থনা, ‘খুব ভাল থাকুন আপনারা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhatri Dwitiya Andal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE