Advertisement
E-Paper

সন্ধ্যার পরে রাস্তা যেন দুষ্কর্মের আখড়া

কোথাও কুড়ি ফুট। কোথাও আবার তার চেয়েও বেশি উচ্চতার খুঁটিতে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বাক্স। তার কোনওটি রোদে-জলে কালো হয়ে গিয়েছে। কোনওটিতে বাসা বেঁধেছে পোকার দল। সূর্য ডুবলে শহরের রাস্তায় আলো পেতে ভরসা এই সব বাক্সই। আবছা হয়ে যাওয়া এই সব বাক্স থেকে আলো রাস্তায় প্রায় পৌঁছয় না বললেই চলে। আধো-অন্ধকার রাস্তায় দুর্ঘটনা থেকে দুষ্কর্ম— সব কিছুই বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ কালনা শহরের বাসিন্দাদের।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০০:৫০
টিমটিমে আলোয় ঘোচে না অন্ধকার। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

টিমটিমে আলোয় ঘোচে না অন্ধকার। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

কোথাও কুড়ি ফুট। কোথাও আবার তার চেয়েও বেশি উচ্চতার খুঁটিতে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বাক্স। তার কোনওটি রোদে-জলে কালো হয়ে গিয়েছে। কোনওটিতে বাসা বেঁধেছে পোকার দল। সূর্য ডুবলে শহরের রাস্তায় আলো পেতে ভরসা এই সব বাক্সই। আবছা হয়ে যাওয়া এই সব বাক্স থেকে আলো রাস্তায় প্রায় পৌঁছয় না বললেই চলে। আধো-অন্ধকার রাস্তায় দুর্ঘটনা থেকে দুষ্কর্ম— সব কিছুই বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ কালনা শহরের বাসিন্দাদের।
কালনার ১৮টি ওয়ার্ডে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বাস। নানা অফিস-কাছারি তো বটেই, শহর জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। সেগুলি দেখতে প্রতি দিনই বহু পর্যটকের ভিড় হয় শহরে। কিন্তু আঁধার নামলেই শহর যেন ঝিমিয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগেও বাসস্ট্যান্ড-সহ শহরের নানা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় শক্ত বাতিস্তম্ভে তিনটি করে জোরালো আলো লাগানো থাকত। শুধু পুরসভা নয়, এই রকম আলো লাগাতে উদ্যোগী হয়েছিল নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিও। কিন্তু শহর আকার-আয়তনে বাড়ার সঙ্গে অলিগলিতে আরও বেশি আলোর প্রয়োজন হয়। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বড়, জোরালো আলোর জন্য বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছিল প্রচুর। তাই ধীরে ধীরে সেই আলো ব্যবহার থেকে সরে আসা হয়। রাস্তায় প্রথমে সাধারণ বাল্ব, পরে সিএফএল বাতি লাগানো হয়।

পুরভোটে ক্ষমতার হাতবদল হওয়ার পরে শহরের রাস্তায় বাতির সংখ্যা কিছু বাড়লেও সেগুলিও সেই সিএফএল বাতি। কিছু ত্রিফলা আলো লাগানো হলেও তা তেঁতুলতলা রোড, ১০৮ শিবমন্দির চত্বর বা মহাপ্রভু মন্দির লাগোয়া রাস্তার মতো কয়েকটি জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাস কয়েক আগে ১০৮ শিব মন্দির এবং রাজবাড়ি চত্বরে আলো-ছায়া প্রকল্প চালু হয়। অন্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলিতে অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা হয়নি। তাই বিকেলের পরে সেখানে পর্যটকেরা তেমন পা মাড়ান না। শহরে ঘুরতে আসা পলাশ পাসোয়ানের কথায়, ‘‘এখানে দেখার অনেক কিছু আছে। তবে সবই দেখে নিতে হবে দিনের বেলায়। কারণ, রাতে দর্শনীয় জায়গা তো দূর, রাস্তাঘাটই ঠিক মতো দেখা যায় না।’’

শহরের রাস্তায় ৩৫ ওয়াটের সিএফএল আলোগুলি লাগানো রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, বাড়ির সামনে লোহার রড-সহ নানান জায়গায়। বৃষ্টি বাঁচাতেই সেগুলি ঢেকে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের বাক্সে। রীতিমতো বেহাল সেই সব বাক্সগুলি। কয়েকটি বাক্স লতাগুল্মে ঢেকে যাওয়ায় আলো রাস্তা অবধি পৌঁছয়ই না। কিছু বাক্স আবার ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে রয়েছে। তেঁতুলতলা এলাকার বেশির ভাগ ত্রিফলা আলোয় কোনওটিতে একটি, কোনওটিতে দু’টি করে আলো খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে।

শহরের বাসিন্দারা জানান, নতুন ও পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা, সেনপাড়া, কাঁসারিপাড়া, হাসপাতালের রাস্তা-সহ বহু জায়গা রয়েছে যেখানে আলোর অভাবে সন্ধ্যার পর থেকে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করা যায় না। এলাকাবাসীর দাবি, পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অন্ধকারে মধ্যে জুয়ার আসর বসে। কয়েকটি দোকানে চোলাই মদের ঠেক চলে। কাছাকাছি একটি অন্ধকার গলিতে সন্ধ্যা নামলেই প্যাকেটে চোলাই বিক্রি হয়। আলোর অভাবে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা রয়েছে নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেও। এলাকার বধূ রমলা কর্মকারের অভিযোগ, ‘‘রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের উদ্দেশে নেশাগ্রস্তেরা নানা কটূক্তি করে।’’ শহরের বাসিন্দা সত্যব্রত তালুকদার অভিযোগ করেন, সেনপাড়া-সহ কয়েকটি জায়গায় বেশ কিছু গলিতে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চুরি-ছিনতাই হয়। অশালীন কাজকর্মও হয়।

এই শহরে বড় বাজার বলে পরিচিত চকবাজার। পাইকারি ও খুচরো, দু’রকম জিনিসপত্রেরই বাজার বসে সেখানে। পাইকারি বাজার ভোর ৩টে থেকে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। খুচরো বাজার চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এই বাজারেও আলোর অভাবে ভুগতে হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। সন্ধ্যার পরে বিক্রিবাটায় অসুবিধা হয় বলে তাঁদের অভিযোগ।

শহরে পর্যাপ্ত আলো না থাকার কথা স্বীকার করেছে পুরসভাও। পুরপ্রধনা দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি, শহরের গুরুত্বপূর্ণ ২০-২৫টি জায়গা চিহ্নিত করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক আলো লাগানো হবে। শহরের দর্শনীয় জায়গাগুলিও আলোয় ভরিয়ে তোলার ভাবনা রয়েছে।’’ পুরসভার আলো বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর গোকুলচন্দ্র বাইনের বক্তব্য, ‘‘সবে নতুন বোর্ড কাজ করা শুরু করেছে। এখন খারাপ আলো মেরামতি এবং নতুন কিছু জায়গায় আলো লাগানোর কাজ চলছে। আলো নিয়ে পুরসভার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’’

kedarnath bhattacharya kalna municipality bus stand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy