Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Asymptomatic Patient

উপসর্গহীন পরিযায়ীরাই চিন্তার কারণ

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিযায়ী শ্রমিক মাত্রই লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠাচ্ছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে শুরু করার পরেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। জেলার ২৩টি ব্লকের মধ্যে গলসি ২ বাদে বাকি ২২টিতেই করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। জেলার ছ’টি পুরসভার মধ্যে গুসকরা ও দাঁইহাটে এখনও আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০৭ জন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পরিযায়ী। আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গহীনের সংখ্যাই বেশি। যা এখন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনেকের।

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘ভাবনা বাড়াচ্ছেন উপসর্গহীনেরাই। সে জন্য আমাদের কিছু পরিকল্পনা নিতে হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, মৃদু উপসর্গ রয়েছে বা একেবারে উপসর্গহীন, এমন আক্রান্তদের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। তার পর থেকে তাঁদের ভর্তি নিতে গড়িমসি করছে ‘কোভিড-১৯’ হাসপাতালও।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিযায়ী শ্রমিক মাত্রই লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠাচ্ছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দেরিতে হলেও রিপোর্ট মিলেছে। দিনকয়েক আগে নির্দেশ আসে, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি ও তামিলনাড়ু থেকে ফেরা শ্রমিকদেরই শুধু সাত দিন প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসে রাখা হবে। তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। বাকি রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকেরা বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকবেন। উপসর্গ না থাকলে তাঁদের নমুনা পরীক্ষাও করা হবে না। এ দিকে, যাঁদের ‘কোভিড-পজ়িটিভ’ রিপোর্চ এসেছে, তাঁদের অধিকাংশই উপসর্গহীন বলে জেনেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এখন উপসর্গহীনদের বাড়িতেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়ায় ‘কোভিড-১৯’ হাসপাতালেও তাঁদের ভর্তি নিতে চাওয়া হচ্ছে না। সব মিলিয়ে, তাঁরা বেশ আতান্তরে পড়েছেন বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকের দাবি।

পূর্ব বর্ধমানে এর আগে সমস্ত আক্রান্তকেই ‘কোভিড’ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী জানান, উপসর্গের মাত্রা কেমন, তা ঠিক করছেন চিকিৎসকেরা। উপসর্গহীন আক্রান্তের চিকিৎসা বাড়িতে হওয়ার মতো পরিবেশ রয়েছে কি না, তা দেখার জন্য একটি স্বাস্থ্য-কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি ‘হোম আইসোলেশন’-এর মাপকাঠি রয়েছে কি না, তা দেখার পরেই উপসর্গহীন আক্রান্তকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত কমিটি এক জন আক্রান্তেরও বাড়িতে থাকার মতো পরিবেশ পায়নি। সেখানে উপসর্গহীন পরিযায়ীদের নমুনা পরীক্ষা না করে স্রেফ নিভৃতবাসে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিভৃতবাসে থাকার পরে তাঁরা বাইরে আসছেন, সবার সঙ্গে মিশছেন। ফলে, সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যকর্তা থেকে চিকিৎসকদের অনেকের।

জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ওই পাঁচটি রাজ্য ছাড়া, কেরলেও প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক থাকেন। চেন্নাই ও কেরল ফেরত তিন জনের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে, যাঁদের নমুনা সংগ্রহের সময়ে কোনও উপসর্গ ছিল না। সব রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব কি না, জেলার স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের কর্তারা এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁরা জানান, সরকার এবং আইসিএমআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। তবে যাতে যত বেশি সম্ভব পরিযায়ী শ্রমিকের নমুনা পরীক্ষা করা যায়, সে দিকে নজর রেখে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE