কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে চাঁদা ঠিক করেছিল এলাকার তিনটি ক্লাব। কিন্তু হঠাৎই ট্রাক পিছু দ্বিগুণ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কর্মীরা। প্রতিবাদ করায় কারখানায় ঢুকে আধিকারিক ও কর্মীদের মারধর, গাড়ি-মোটরবাইকে হামলার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের কমলপুরে।
বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় জড়িতরা তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব তা মানতে চাননি। ঘটনার পরে তাঁদের কর্মী-আধিকারিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে বেসরকারি ওই ফেরো অ্যালয় কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান। প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে কারখানা গোটানোর কথাও ভাবতে হবে বলে তাঁদের দাবি।
দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপ থেকে কমলপুর যাওয়ার পথে বাঁ দিকে রয়েছে ফেরো অ্যালয় কারখানাটি। কমলপুরে তিনটি ক্লাবে অগ্রহায়ন কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাবের তরফে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হয়, কারখানায় ঢোকা প্রতিটি ট্রাক থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ তা মেনে নেন। ক্লাবের তরফে চাঁদার রসিদের বই দিয়ে যাওয়া হয় কারখানায়। প্রতি সন্ধ্যায় সারা দিনে জমা পড়া চাঁদা নিয়ে যায় ক্লাব।
কারখানা সূত্রের দাবি, বুধবার ক্লাবের তরফে জানানো হয়, এই হারে চাঁদা উঠলে পুজোর জৌলুস বজায় রাখা যাবে না। ৫০ টাকার বদলে চাঁদার হার ১০০ টাকা করতে হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। অভিযোগ, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ বেশ কিছু লোকজন এসে কারখানায় ঢুকে পড়ে। তারা কারখানার আধিকারিক ও কর্মীদের কিল, চড়, ঘুষি মারতে শুরু করে। মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় কয়েকজনকে। কারখানার এক আধিকারিকের গাড়ি দুমড়ে দেওয়া হয়। একাধিক মোটরবাইক ফেলে দেওয়া হয়। যাওয়ার আগে তারা হুমকি দিয়ে যায়, তাঁদের মর্জি মতো চাঁদা না দিলে ফল ভাল হবে না। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কারখানায়। বিকেলে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার রাজেশকুমার পুরুষোত্তম অভিযোগ করেন, সকাল ৯টা নাগাদ কর্মীরা কাজে ঢুকছিলেন। সেই সময়ে দুষ্কৃতীরা এসে হামলা চালায়। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর চাঁদা নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা আগে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। আলোচনা করে চাঁদার হার ঠিক করা হয়েছিল। তার পরেও এমন ঘটায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। কোনও জুলুমবাজি আমরা বরদাস্ত করব না।’’ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে নবান্নের দ্বারস্থ হবেন বলে দাবি করেন তিনি।
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের আধিকারিক সঞ্জয় গড়াই দুষ্কৃতীদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘সকালের ঘটনা ভাবলে এখনও হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে।’’ কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঘটনার সময়ে গেটের উল্টো দিকে পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু অশান্তি থামাতে পুলিশের দেখা মেলেনি। এমনকী, তদন্তে যাওয়ার আগে এক পুলিশ অফিসার স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিখিল নায়েককে ফোন করে খোঁজ নেন বলে অভিযোগ। কারখানার এক আধিকারিক দাবি করেন, ‘‘ঘটনার সময়ে নিখিলবাবু উপস্থিত ছিলেন না। তবে যারা এসেছিল তারা এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলেই পরিচিত।’’
গত পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন নিখিলবাবু। কমলপুরে বিভিন্ন কারখানায় দলের তরফে শ্রমিক সংগঠনের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন তিনি। তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চাঁদা নিয়ে ছোটখাট একটা ঘটনা ঘটেছিল। খবর পেয়েই আমি গিয়ে সবাইকে সরিয়ে দিই। মারধর হয়নি।’’ তিনি জানান, চাঁদা নিয়ে অশান্তি এড়াতে আলোচনায় বসে দু’পক্ষ একটি পদ্ধতি চালু করেছিল। তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি এ সবের সঙ্গে জড়িত নই। কারখানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’
পুলিশ অবশ্য কোনও গাফিলতির কথা মানতে চায়নি। দুর্গাপুর থানার তরফে জানানো হয়, ঘটনায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।