E-Paper

ফুচকা বিক্রি করে জীবনের স্বাদ ফেরাচ্ছেন ববিতা

ফুচকা বিক্রিতে মাকে সাহায্য করে ছোট ছেলে, রামশিস হিন্দি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র বিপিন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:০৭
কাজের মাঝে ববিতা।

কাজের মাঝে ববিতা। —নিজস্ব চিত্র।

ন’বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে দিনকয়েক ভুগে মারা যান ফুচকা বিক্রেতা সুরবেশ ঠাকুর। বর্ধমান শহরের কালীবাজারের কাঠেরপুলের কাছে তাঁর ফুচকার স্টল ছিল। তিন সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন সুরবেশের স্ত্রী ববিতা। হাল না-ছেড়ে, সংসার সামলে কয়েক দিন পরে বাড়িতেই ফুচকা তৈরি শুরু করেন। এক বিকেলে পুরনোর জায়গায় ফুচকার স্টল নিয়ে বসেও পড়েন।

কয়েক দিন আগে স্টলটি ভেঙে যাওয়ায় এখন ভ্যানের উপরেই ফুচকা, তেঁতুলজল আর আলুমাখা নিয়ে বসছেন। লড়াইয়ের লম্বা কাহিনি শুনিয়ে বললেন, ‘‘গত ন’বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে। আঁধারে থাকা কাঠের পুলের মোড় আলোয় ঝলমল করছে। কিন্তু ফুচকা বিক্রির হার বাড়েনি। আগেও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ২০০-৩০০ টাকা হত। এখনও তাই। তার মধ্যেই লড়াই চালিয়ে
যেতে হচ্ছে।’’

ফুচকা বিক্রিতে মাকে সাহায্য করে ছোট ছেলে, রামশিস হিন্দি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র বিপিন। সে বর্ধমানের বিদ্যার্থী গার্লস স্কুলের কাছে বাঁকার পাড়ের বাড়ি থেকে অনেকটা পথ ভ্যান চালিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ কাঠের পুলে চলে আসে। আবার রাত ১০টা নাগাদ ভ্যান নিয়ে ফেরে। তার ফাঁকেই মাকে সাহায্য করে বিপিন। ববিতার কথায়, “যখন স্কুল থাকে না, তখন বিপিনই ভ্যান নিয়ে আমার সঙ্গে যাতায়াত করে।’’ তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে শিখা হিন্দি স্কুল থেকে এই বছর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেবে। সে পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর মেজো ছেলে জীবেশ বাড়িতেই থাকে।

ববিতার কথায়, “বিপর্যয়ের সময় ছেলেমেয়েরা খুব ছোট ছিল। কী খাওয়াব ঠিক ছিল না। তার উপরে নানা জনের নানা কথা ছিল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কী ভাবে চলবে, ভাবলেই চোখের জল চলে আসত।’’ বাঁকার পাড়ে সূর্য মন্দিরের কাছেই ববিতারা থাকেন। বাঁকার পাড়ে এক বিকেলে দাঁড়িয়ে তাঁর মনে হয়, “চোখের জল ফেলে তো আর পেট ভরবে না। ফুচকা তৈরির একটা ধারণা ছিল। তাকেই কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি।’’ ধীরে ধীরে বিক্রি ও পরিচিতি দুটোই বেড়েছে।

তাঁর কথায়, “প্রথম দিকে সঙ্কোচ হচ্ছিল। ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলেছি। এখন ছেলেমেয়েগুলো মানুষ হলেই আমার লড়াই সার্থক হবে।’’ পাশে বসে থাকা ছোট ছেলে মোবাইল ঘাঁটার ফাঁকে শুনতে পেল কথাটা। উত্তর আসে, ‘‘আমরা পড়ছি, বড়ও হচ্ছি। তোমাকে আর বেশি লড়াই করতে দিলে তো!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy