Advertisement
E-Paper

পাচারের উদ্দেশ্যেই অনুপ্রবেশ

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে একের পর এক বারংলাদেশি  গ্রেফতার হয়েছে বাংলাদেশি লছিপুর থেকে। কিন্তু তারা কী উদ্দেশ্যে এলাকায় ডেরা বাঁধছে, তা নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী। তবে তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, এই অনুপ্রবেশের নেপথ্যে তিনটি কারণ থাকতে পারে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:০০

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে একের পর এক বারংলাদেশি গ্রেফতার হয়েছে বাংলাদেশি লছিপুর থেকে। কিন্তু তারা কী উদ্দেশ্যে এলাকায় ডেরা বাঁধছে, তা নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী। তবে তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, এই অনুপ্রবেশের নেপথ্যে তিনটি কারণ থাকতে পারে।

কী কী তা? প্রথমত, নারী-পাচারের বেশ কিছু ঘটনা সামনে এসেছে। আর তা ঘটে এলাকার কয়েক জন দালালের হাত ধরে। তেমনই কয়েক জন ‘দালালে’র সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মোটা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার কিশোরী ও তরুণীদের এ দেশে আনা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা এলাকার ‘দালাল’-দের সঙ্গে যোগসাজস থাকে। বাংলাদেশ থেকে তরুণী, কিশোরীদের এনে নিয়ে আসা হয় লছিপুরে। তার পরে সেখান থেকে অন্য এলাকায় পাচার বা লছিপুরেই রাখা হয় তাঁদের। পেশায়, যৌনকর্মী রেহানা (নাম পরিবর্তিত) ও রুকসানা (নাম পরিবর্তিত) নামে দু’জন জানান, তাঁরাও আসলে বাংলাদেশের বাসিন্দা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লছিপুর থেকে যে মহিলা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁকেও এখানে পাচার করে আনা হয়।

দ্বিতীয়ত, যৌনকর্মের উদ্দেশ্য ছাড়াও আরও যে কারণে এই অনুপ্রবেশ, তা হল, মাদকের কারবার। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে ব্রাউন সুগার, হেরোইন-সহ নানা ধরনের ড্রাগের কারবারে যুক্ত এক দল বাংলাদেশিও এই এলাকায় ডেরা বেঁধে কারবার চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ রয়েছে এলাকার কয়েক জনের। বিশেষ সূত্রে তেমনই কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বনগাঁ পেরিয়ে আসে মাদক। এখানে কড়া ঘুমের ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে তা লছিপুর ও চবকা যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেলরুই যাওয়ার রাস্তায় ডান হাতের ফাঁকা মাঠ ও পলাশের জঙ্গলে আকছার এই মাদকের লেনদেন চলে।

তৃতীয়ত, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের একাংশের ধারণা, এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম করার জন্যও অনেক সময়ে জড়ো হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। সে ক্ষেত্রে যৌনপল্লিতে গা ঢাকা দেওয়াটাও তাদের পক্ষে সহজ। সম্প্রতি আসানসোল শিল্পাঞ্চল-সহ পড়়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সীমানাবর্তী এলাকায় একের পর এক লুটপাট হয়েছে। সেই সমস্ত ঘটনায় অনুপ্রবেশকারীরা জড়়িত কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে কী ভাবে সীমান্ত পার হচ্ছে এই অনুপ্রবেশকারীরা। যদিও তিন জন অনুপ্রবেশকারীকে জেরা করে পুলিশ দাবি করেছে, ধৃতেরা তাদের কাছে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার সব থেকে সহজ পথ বেনাপোল ও টাকি। এই দু’জায়গায় ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী এমন অনেক অংশ রয়েছে, যেগুলি একেবারেই অসুরক্ষিত। সেখানেই দু’দেশের দালাল মারফত জন প্রতি চার হাজার টাকা খরচ করলেই ঢুকে পড়া যায় এ দেশে। তার পরে লছিপুরে অনুপ্রবেশকারীরা এসে ওঠে এবং স্থানীয় দালালেরা তাদের আত্মীয় পরিচয় দেয়। সেই পরিচয় ব্যবহার করেই রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড বানিয়ে ফেলতে পারলেই কেল্লাফতে।

তবে কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘পুলিশ যৌনপল্লিতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। সন্দেহজনক কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলেই তদন্ত করা হচ্ছে।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক জন অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতারের পরেই শিয়রে মেঘ দেখে বেশ কিছু অনুপ্রবেশকারী এলাকা ছা়ড়ছে। এই অনুপ্রবেশকারীরা যাতে এলাকার অন্য কোথাও ঘরভাড়া না নিতে পারে, তার জন্য নিয়মিত ঘোষণা করা হয় বলে পুলিশ জানায়। (শেষ)

Infiltration Smuggling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy