তারক জয়সওয়াল। নিজস্ব চিত্র
লটারিতে ভাগ্য খুলে গেলেই টাকা ব্যাঙ্কের ভল্টে রেখে আসার পরিকল্পনা ছিল— মেমারির ব্যাঙ্ক থেকে টাকা গায়েবের ঘটনায় ধৃত ব্যাঙ্ককর্মী জেরায় এ কথা জানিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। গায়েব হওয়া টাকা কোথায় লুকোনো আছে, তা উদ্ধার করাই এখন মাথাব্যথা তদন্তকারীদের।
মেমারি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার ভল্ট থেকে প্রায় সাড়ে চুরাশি লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পুলিশে অভিযোগ করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ওই শাখার কর্মী তারক জয়সওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, তিনি সপ্তাহ দুয়েক ধরে গরহাজির ছিলেন। শুক্রবার পুলিশ ব্যাঙ্কে তদন্তে যায়। সে দিনই ব্যাঙ্কে আসেন তারক। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার বর্ধমান আদালত তাঁকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
পুলিশের দাবি, ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, লটারির টিকিট কেটে ধনী হওয়ার নেশায় এই দুষ্কর্মের রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কের বর্ধমানের রাজবাটি শাখায় কর্মরত থাকাকালীন তিনি লটারির টিকিট কিনতেন। সে জন্য বাজার থেকে চড়া সুদে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। তা সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছিল ৭ লক্ষ টাকা। পাওনাদারদের চাপে বাদামতলায় নিজের বাড়ি বিক্রি করে নতুনপল্লিতে ভাড়াবাড়িতে থাকছিলেন বলে ধৃত দাবি করেছেন, দাবি তদন্তকারীদের।
পুলিশের দাবি, ব্যাঙ্কের মেমারির শাখায় বদলি হওয়ার পরে তারক খেয়াল করেন, অন্য আধিকারিকেরা টাকা, কয়েন গোনায় বিশেষ নজর দেন না। ব্যাঙ্কের ভল্টের দিকেও সে ভাবে যান না। সেই সুযোগে মাসের পর মাস নথিতে কয়েন জমা দেখিয়ে তার সমপরিমাণ নগদ টাকা সরিয়ে নেন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ছ’লক্ষ টাকা কয়েন দেখিয়ে সেই পরিমাণ নগদ সরান বলে তদন্তে জানা গিয়েছে, জানায় পুলিশ।
শুক্রবার দফায়-দফায় জেরার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারক। মেমারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় তাঁর। পুলিশ জানায়, ধৃতের দাবি, ২৮-৩০ নভেম্বরের মধ্যে তিন বার আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সে জন্য তাঁকে ৩০ নভেম্বর থেকে ছ’দিন নার্সিংহোমে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। স্ত্রীকে দিয়ে ভল্টের চাবি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কে।
জেলার এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, তারককে জেরা করে জানা গিয়েছে, তিনি ভেবেছিলেন ২০-২৫ লক্ষ টাকা সরিয়েছেন। লটারি জিতলেই ওই টাকা চুপিসারে ব্যাঙ্কে রেখে দেবেন। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘কিন্তু সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকা গায়েব হয়েছে শোনার পর থেকে তিনি কাঁপতে থাকেন।’’ তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, বর্ধমান শহরের চারটি লটারি এজেন্সির কাছে দিনে ২০-২২ হাজার টাকার লটারির টিকিট কিনতেন তারক। জেরায় পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, নতুনপল্লির বাড়িতে প্রায় এক টন টিকিট মজুত রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০-৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
পুলিশের দাবি, ধৃত জানিয়েছেন, যে টাকা সরিয়েছেন, সবই লটারির টিকিট কেটে খরচ করে ফেলেছেন। কিন্তু এ কথা পুলিশ বিশ্বাস করছে না। সে জন্য ধৃতের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতের পরিচিত ও পরিজনদের সঙ্গে কথা বলা হবে। ভল্ট খুলতে পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়। হাতের ছাপও দরকার হয়। তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। টাকা উদ্ধারই এখন লক্ষ্য, জানান তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy