কালনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা ভাগীরথী। নদীর নানা জায়গায় রয়েছে চোরা স্রোত। কখনও স্নান, কখনও পুজোর জল নিতে নেমে প্রায়ই তলিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের তরফে বিপজ্জনক ঘাটগুলিকে চিহ্নিত করে সতর্কতামূলক বোর্ড টাঙানো বা কোনও সঙ্কেত বসানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, আর কত প্রাণ গেলে হুঁশ ফিরবে!
ভাগীরথীর দুই পাড়ে কালনা, কাটোয়ার বহু গ্রাম রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের স্নান, পারাপার, মাছ ধরার কাজ চলে ভাগীরথীতে। বিভিন্ন পাবর্ণের আগে স্নান করতে, মহালয়ায় তর্পণ করতে আসেন বহু মানুষ। তার ফাঁকেই ওত পেতে থাকে বিপদ। তবে অনেকেরই দাবি, স্নান করতে নামার সঙ্গে সঙ্গে কিছু বোঝা যায় না। একটু গভীরে যেতেই চোরা স্রোত মালুম পড়ে। তলিয়ে যেতে দেখলে গামছা, দড়ি, কাপড় ফেলে উদ্ধারের চেষ্টাও হয়। কিন্তু লাভ হয় না।
এ মাসের শুরুতেই পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নবম শ্রেণির এক পড়ুয়া পাটুলির বহরা এলাকার ভাগীরথীর ঘাটে জুতোয় লাগা কাদা ধুতে যায়। হাত ফস্কে জুতো ভেসে যেতে সে জলে নামে। দু’দিন পরে তার দেহ মেলে। মহিষমর্দ্দিনীতলা ঘাটের কাছে নৌকা থেকে পড়ে স্রোতে তলিয়ে যায় বৃদ্ধ মৎস্যজীবীর দেহ। বর্ধমান থেকে মোটরবাইকে কালনার কৃষ্ণদেবপুরে ইটভাটা লাগোয়া ভাগীরথীর ঘাটে স্নান করতে নেমে মৃত্যু হয় রাজ কলেজের এক ছাত্রের। ২০২৩ সালে ২২ অক্টোবরও এই ঘাটেই স্নান করতে নেমে অভ্র বসাক এবং সঞ্জু বসাক নামে দু’জন তলিয়ে যায়।পরে দুটি আলাদা আলাদা স্থানে তাঁদের দেহ মেলে।
কালনার বাসিন্দা গোপাল ভৌমিক বলেন, ‘‘অনেকেই বুঝতে পারেন না যেখানে নামছেন, সেখানে স্রোত কতটা। সেই কারণে বিপদ হয়। প্রশাসনের তরফেও নদীর কোন কোন জায়গায় বিপদ রয়েছে, তা জানানো হয়নি।’’ অনেকেরই দাবি, বিপজ্জনক ঘাট এবং তার পাশ্বর্বতী এলাকা চিহ্নিত করা খুব কঠিন নয়। ব্লক প্রশাসন পঞ্চায়েতের কাছ থেকে সেই তালিকা পেতে পারে। মহকুমা প্রশাসনের দাবি, বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে মহকুমা পর্যায়ের প্রস্তুতি-বৈঠকেও বিপজ্জনক ঘাটগুলিকে চিহ্নিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক (কালনা) শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমরা প্রায় কুড়িটি ঘাট চিহ্নিত করেছি। সেখানে পতাকা এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হবে।’’
কাটোয়া ও দাঁইহাট শহর ছাড়াও কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর এলাকার বেশ কয়েকটি ভাগীরথীর ঘাটেও দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় কার্যত মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে। দিন তিনেক আগে কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যাওয়া বীরভূমের এক কিশোরের দেহ মেলে রবিবার। তার আগেও একাধিক মৃত্যু হয়েছে। এ সব দুর্ঘটনায় অপরিকল্পিত স্নানের ব্যবস্থাকরেই দায়ী করেছেন মৃতদের পরিজনেরা। উপযুক্ত সংস্কারের দাবিও উঠেছে। নির্মল সাহা নামে কাটোয়ার এক বাসিন্দা বলেন, “গোয়ালপাড়া ঘাট থেকে শুরু করে দেবরাজ ঘাট ও বাজার ঘাটে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। কেতুগ্রাম, দাঁইহাট, অগ্রদ্বীপেও দুর্ঘটনার কথা কানে আসে। নদীতে জল কম থাকলেও দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্ষায় তো বিপদ আরও বেশি।’’ মহকুমা প্রশাসনের দাবি, দুই পুরসভা, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে স্নানের ঘাটগুলি স্থায়ী ভাবে সংস্কারের উদ্যোগ করা হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)