Advertisement
১৮ জুন ২০২৪
শুরু থেকে শেষ, মনোনয়ন পর্ব কাটল মারধর, অশান্তিতেই

কার্জন গেট দখলে নিল লাঠি-বাহিনী

শনিবার তৃণমূল-সিপিএমের খণ্ডযুদ্ধ হওয়ার পরে পুলিশ এ দিন অনেকটাই সতর্ক ছিল। হকার্স মার্কেট, জেলা কোষাগার ভবন এবং পুলিশ সুপারের দফতর যাওয়ার রাস্তায় বাঁশের ‘ব্যারিকেড’ করা হয়েছিল।

লাঠি-হাতে: সোমবার, কার্জন গেটের সামনে। নিজস্ব চিত্র

লাঠি-হাতে: সোমবার, কার্জন গেটের সামনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

শুরুর দিন যা হয়েছিল, শেষ দিনও ছবিটা বদলাল না বর্ধমানে।

সোমবার, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বের শেষ দিন বর্ধমানের রাজপথ লাঠি হাতে দাপিয়ে বেরাল দুষ্কৃতীরা। তাদের হাতে মার খেলেন মনোনয়ন দিতে আসা বিরোধী শিবিরের অনেকেই। দুষ্কৃতীদলের ভয়ে কার্জন গেট সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের একাংশ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিলেন। দুষ্কৃতীরা তৃণমূল আশ্রিত বলে অভিযোগ বিরোধীদের। মনোনয়ন পর্বের শেষ প্রহরে পুলিশ কিছুটা সক্রিয় হয়ে কয়েক জন তৃণমূল কর্মীকে আটক করে বর্ধমান থানায় নিয়ে যায়।

শনিবার তৃণমূল-সিপিএমের খণ্ডযুদ্ধ হওয়ার পরে পুলিশ এ দিন অনেকটাই সতর্ক ছিল। হকার্স মার্কেট, জেলা কোষাগার ভবন এবং পুলিশ সুপারের দফতর যাওয়ার রাস্তায় বাঁশের ‘ব্যারিকেড’ করা হয়েছিল। এ ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা পার হয়ে মহকুমাশাসকের অফিসে যেতে হচ্ছিল। কার্জন গেটের মুখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত সরকারের নেতৃত্বে প্রায় একশো জন পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন। তা সত্ত্বেও কার্জন গেট থেকে বাদামতলার মোড় পর্যন্ত তৃণমূলের ‘লাঠিধারী’ যুবকরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে বলে অভিযোগ।

এ দিন সকাল ৯টা থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট চলে যায় ওই ‘লাঠিধারী’দের হাতে। কার্জন গেট এলাকা ছাড়িয়ে তারা ধীরে ধীরে দখল নেয় বাদামতলা মোড়, ঢলদিঘি, জেলা আদালত, রেজিস্ট্রি দফতরের এলাকা। কয়েকশো যুবকের মধ্যে ৭০-৮০ জনের হাতে ছিল বাঁশ, লাঠি, লোহার পাইপ। তাদের ধারণা মতো পথচারীদের কাউকে সন্দেহ হলেই রাস্তা আটকে তাঁর ব্যাগ কেড়ে মনোনয়নের নথি খোঁজাখুঁজি করছিল ওই দুষ্কৃতী বাহিনী। বিরোধী দলের হয়ে মনোনয়নের নথি মিললেই প্রথমে চড়-কিল-ঘুষি, তার পর দেওয়া হচ্ছিল লাঠির ঘা। মাঝেমধ্যে পুলিশ তৃণমূলের জমায়েতগুলিকে সরানোর চেষ্টা করছিল, তবে তা নিতান্তই লোক দেখানো বলেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন।

গলসি থেকে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন ফিরোজা খাতুন। কার্জন গেট থেকে তাড়া করে তাঁকে টেলিফোন ভবনের সামনে ধরে ফেলে জনা সাত-আটেক যুবক। চলে আসেন লাঠি হাতে কিছু মহিলাও। ফিরোজার হাত থেকে মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়েই শুরু হয় মারধর। কোনও রকমে ছাড়া পেয়ে বাসে করে পালিয়ে যান। শুধু রাজনৈতিক দলের লোকেরাই নয়, সাধারণ মানুষজনও এ দিন ‘লাঠি’ বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাননি। শহরের হাঁটুদেওয়ান এলাকার বিমা সংস্থার এজেন্ট কমল সিকদার এক উপভোক্তাকে নিয়ে সংস্থার দফতরে যাচ্ছিলেন। কাঁধে ব্যাগ দেখে রাস্তা আটকে লাঠি পেটা করা হয় বলে অভিযোগ।

তবে, এই কাজ করতে গিয়ে শুধুমাত্র বিরোধীরা নয়, কিছু ক্ষেত্রে শাসক-শিবিরের লোকজনও মার খেয়েছেন। আবার বিক্ষুব্ধ তৃণমূলকে আটকানোর জন্য ‘সক্রিয়’ ছিলেন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকেরা। তৃণমূলের হয়ে গলসি থেকে মনোনয়ন জমা দিতে বর্ধমানে এসেছিলেন সোনালি বেগম ও নুরউদ্দিন শেখ। মনোনয়ন জমা দেওয়া তো দূরের কথা, দলের লোকেদের হাতে মার খেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে বলে তাঁরা জানালেন। গলসি থেকে জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী নুরুন্নেসা প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়ে বললেন, “আমাদের দলের লোকেরাই মনোনয়ন ছিঁড়ে দিচ্ছে, মারধর করছে। কী চলছে!”

এরই মধ্যে কার্জন গেটে হাজির হয়ে যান বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান-পারিষদ খোকন দাস, সাহাবুদ্দিন শেখ, সুশান্ত প্রামাণিকেরা। তাঁরা আসার পরে প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন নিয়ে খোকনবাবুকে দেখানো হচ্ছিল। তিনি অনুমতি দিলে মনোনয়ন নিয়ে মহকুমাশাসক দফতরে দিকে যেতে পারছিলেন প্রার্থীরা।

বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে গোলমাল হয়েছে মেমারি-ভাতারেও। সিপিএমের অভিযোগ, মেমারিতে প্রাক্তন পুরপ্রধান অভিজিৎ কোনারকে মারধর করেছে তৃণমূল। ব্লক দফতর থেকে ৫০০ ফুট দূরে অভিজিৎবাবুদের বাড়ি। তাঁর বাড়ির বাগানে বসে মনোনয়নের কাজ চলছিল। সেই সময় তৃণমূলের লোকেরা গিয়ে হামলা চালায়। তার প্রতিবাদ করলে অভিজিৎবাবুকে মারধর করা হয়। ভাতারে সিপিএম নেতা সৃজিত কোনারকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি-র জেলা সংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর অভিযোগ, “বর্ধমানে আমাদের ২৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। আর ভাতারে আমাদের দু’জন নেতাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি। বিরোধীরা প্রার্থীই না পেলে আমরা কী করব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Curzon park West Bengal Panchayat Election 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE