Advertisement
E-Paper

মালগাড়ির চালক সিগন্যাল মানেননি? ঠিক বলল রেল? আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে আসা নথি কী বলছে

রেলের এক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার আগে রাঙাপানির স্টেশনমাস্টার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালগাড়ির চালক দু’জনকেই ‘টিএ-৯১২ ফর্ম’ দেন। যার ভিত্তিতেই ট্রেন চালাচ্ছিলেন চালকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৪ ১৭:১১
Loco pilot of goods train may be followed the rules and regulation of TA-912 form

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়ির দুর্ঘটনা ঘটল কেন? দায় কার? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তদন্ত করবে রেল। তবে দুর্ঘটনার পর রেলের একটা বড় অংশই দাবি করছে, মালগাড়ির চালক সিগন্যাল না মেনে বিপদ ঘটিয়েছেন! সত্যিই কি সিগন্যাল ভেঙেছিলেন মালগাড়ির চালক?

আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে আসা নথি থেকে স্পষ্ট রেলের ওই দাবি ‘সঠিক’ নয়। রেলের প্রাক্তন কর্মীদের একাংশও তেমনটা মনে করছেন। মালগাড়ির চালক এবং ট্রেন ম্যানেজার (গার্ড)-এর কাছে লিখিত নির্দেশ ছিল, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল অকেজো। কোন কোন সিগন্যাল লাল থাকা সত্ত্বেও চালক মালগাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাবেন, সেই সংক্রান্ত নির্দেশও ছিল লিখিত ওই অনুমতিপত্রে। একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘার চালক ও ট্রেন ম্যানেজারকেও।

রেল সূত্রে খবর, সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ থেকেই অকেজো ছিল রাঙাপানি এবং চটেরহাটের মধ্যেকার স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। এমন পরিস্থিতিতে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চালকদের ভরসা ‘কাগুজে অনুমতি’র। রেলের পরিভাষায় এই অনুমতিপত্রকে বলা হয় ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ (পিএলসিটি)। রেলের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার আগে রাঙাপানির স্টেশনমাস্টার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালগাড়ির চালক দু’জনকেই ‘টিএ-৯১২ ফর্ম’ দেন। ফর্ম দু’টিতে একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল, কোন কোন সিগন্যাল লাল থাকা সত্ত্বেও ‘ভাঙতে’ পারবেন চালক। এমনকি, কোথা থেকে কোন অবধি এই ‘অনুমতি’ বহাল থাকবে, তারও উল্লেখ ছিল।

সেই নথিতে দেখা যাচ্ছে, রাঙাপানি থেকে চটেরহাট পর্যন্ত মোট ৯টি লাল সিগন্যাল ‘ভাঙা’র অনুমতি ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালগাড়ির চালকের কাছে। বলা হয়েছিল, এ৫-৬৫৪, এ৫-৬৫২, এ৫-৬৫০, এ৫-৬৪৮, এ৫-৬৪৬, এ৫-৬৪৪, এ৫-৬৪২, এ৫-৬৪০ এবং এ৫-৬৩৮ সিগন্যাল ‘ভাঙা’ যাবে। অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল, চালককে অবশ্যই নজর রাখতে হবে যাত্রাপথের লেভেল ক্রসিং গেটের উপর। যদি গেট বন্ধ থাকে তবেই ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন চালক। গেট খোলা থাকলে তার আগেই ট্রেন থামিয়ে দিতে হবে। তার পর সবটা দেখেশুনে এগোতে হবে ট্রেন নিয়ে। এই নির্দেশ দু’টি ট্রেনেরই চালক-গার্ডকে দিয়েছিলেন রাঙাপানির স্টেশনমাস্টার।

লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা থাকলেও স্টেশনমাস্টারের ওই নির্দেশনামায় কোথাও লেখা ছিল না, কত গতিবেগে গাড়ি চালাবেন চালকেরা। প্রাক্তন এক রেলকর্তার কথায়, ‘‘সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, মালগাড়ির চালক সিগন্যাল মানেননি, এ কথা ঠিক নয়। তিনি ‘টিএ ৯১২’-তে লেখা নির্দেশ মেনেই এগিয়েছিলেন।’’ রেল সূত্রে খবর, রাঙাপানি স্টেশন ম্যানেজার সিগন্যাল নম্বর এ৫-৬৫৪ থেকে চালককে লাল থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। আর দুর্ঘটনাটি ঘটে এ৫-৬৫০ সিগন্যালের কাছে। রাঙাপানি স্টেশন থেকে দুর্ঘটনাস্থলের দূরত্ব অনুমানিক দু’কিলোমিটার। রেলেরই একটা সূত্র বলছে, দুর্ঘটনার সময় মালগাড়ির গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার। যদিও উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার জনককুমার গর্গ (তাঁর নেতৃত্বেই তদন্ত করছে রেল) দাবি করেছেন, দুর্ঘটনার সময় মালগাড়ির গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৭৮ কিলোমিটার। এত গতিতে কেন ট্রেন ছোটাচ্ছিলেন মালগাড়ির চালক, তারই উত্তর খুঁজছে রেল। জনক জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে না।

Kanchanjunga Express Accident Train accident loco Pilot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy