বনমালি হাজরা
ক্ষোভের আঁচ মিলেছিল তালিকা প্রকাশের পরেই। ভাতারের প্রার্থী নিয়ে দলের কর্মীদের সেই ক্ষোভ এসে পড়ল একেবারে কলকাতার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনের সামনে।
গত বারের জয়ী প্রার্থী বনমালী হাজরাকেই প্রার্থী করতে হবে, এই দাবি নিয়ে এ দিন সকালে ভাতারের এক দল তৃণমূল নেতা-কর্মী একটি বাস ও কয়েকটি ছোট গাড়িতে চড়ে তৃণমূল ভবনে হাজির হন। ভাতার ব্লক তৃণমূল সভাপতি কমল সোম, ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নুর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী ‘বহিরাগত প্রার্থী নয়, বনমালীদাকে প্রার্থী করতে হবে’— এই স্লোগান দিয়ে সেখানে বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু দলের কোনও নেতার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে শেষমেশ তাঁরা বিকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, “কর্মীরা তো দলের কাছেই তাঁদের কথা বলবেন। কোথাও কোনও ক্ষোভ নেই।”
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানে মাটি উৎসবের উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি নিজে বনমালীবাবুকে আশ্বস্ত করেছিলেন, ভাতারে তাঁকেই প্রার্থী করা হবে। কারও কথায় কান না দিয়ে তিনি যেন উন্নয়নের কাজ করে যান, সেই পরামর্শও দিয়েছিলেন বলে দলের ওই সূত্রের দাবি। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, ভাতার থেকে দলের আউশগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি তথা জেলা যুব সভাপতি সুভাষ মণ্ডলকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে ভাতারে বনমালীবাবু ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে বারবার বিবাদ বেধেছে। দলের উচ্চ নেতৃত্বের তরফে দু’পক্ষকে সতর্কও করা হয়েছে। ভোটের সময়ে এলাকায় দু’পক্ষের গোলমাল এড়াতেই আউশগ্রামের সুভাষবাবুকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রার্থী ঘোষণার পরেই ঘনিষ্ঠ মহলে বনমালীবাবু বিস্ময় প্রকাশ করে দাবি করেন, নেত্রীর ভাবনার উপরে কারও প্রভাব পড়েছে বলে তিনি মনে করছেন। এর পরেই এ দিন তাঁর অনুগামীরা তাঁকে প্রার্থী করার দাবি নিয়ে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতায় হাজির হন।
ভাতারের তৃণমূল নেতা নুর আলম চৌধুরী, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, “সকালেই বুথ স্তরের কর্মীরা কলকাতায় তৃণমূল ভবনের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে গিয়ে বনমালীদাকে ফের প্রার্থী করার আবেদন জানানো হয়েছে। কারণ, গত পাঁচ বছরে বনমালীদা বিধায়ক হিসেবে অনেক উন্নয়ন করেছেন। এই খবর বনমালীদা পাওয়ার পরেই আমাদের কলকাতা পাঠিয়ে ওই সব কর্মীদের ভাতারে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশ দেন।” বনমালীবাবু বলেন, “অনেক ভক্তই তো রয়েছে। তাঁদের ইচ্ছে হয়েছে সে জন্য গিয়েছেন। কিন্তু দলের নির্দেশ কোনও ভাবেই অমান্য করা যায় না।”
শুধু ভাতার নয়, প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জেলার আরও কয়েকটি কেন্দ্রে। যদিও প্রকাশ্যে কোনও বিক্ষোভ হয়নি। শনিবার বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকে বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলরদের মধ্যে কয়েক জন গরহাজির ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। গত বারের মতো এ বারও বর্ধমান উত্তরে প্রার্থী হয়েছেন নিশীথ মালিক, যিনি এখন বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। তৃণমূলের একাংশের দাবি, গত ভোটে হারের পরে নিশীথবাবুর সঙ্গে দলের যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তার পরেও দল তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে জিতিয়ে কর্মাধ্যক্ষ করে। তার পরে ফের নিশীথবাবুকে বিধানসভায় প্রার্থী করা নিয়ে দলের এক জেলা পরিষদ সদস্যের অভিযোগ, “যাঁর সঙ্গে কার্যত পাঁচ বছর দলের কোনও সম্পর্ক নেই, তাঁকে প্রার্থী করে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করা হল। এর প্রতিবাদে সই সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।”
মেমারির গত বারের জয়ী প্রার্থী আবু হাসেম মণ্ডলকে এ বার টিকিট না দেওয়ায় এলাকায় দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সুর রয়েছে। তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত স্থানীয় এক নেতার বক্তব্য, “বহিরাগত প্রার্থীর থেকে হাসেমই ভাল ছিলেন বলে মনে হচ্ছে।” আবু হাসেমের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “জয়ী প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়া হল, এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে!”
গত বার খণ্ডঘোষের প্রার্থী অলোক মাঝিকে এ বার গলসি থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। অলোকবাবু আবার বর্ধমান জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। গলসির তৃণমূলের নেতারা দাবি করেন, আগের বার অন্য কেন্দ্রে হেরে যাওয়া প্রার্থীকে এখানে জেতা আসনে টিকিট দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে দলের কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন। বর্ধমান উত্তরের প্রার্থী নিশীথবাবু, গলসির অলোকবাবুরা শুধু বলেন, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা-ই চূড়ান্ত।’’ মেমারিতে বিদায়ী বিধায়ক আবু হাসেমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও ক্ষোভের প্রশ্ন নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy