Advertisement
E-Paper

রাত-পথে উদ্দাম গতি, চলছে ধুম ৪

রাস্তায় সবে পা রেখেছেন আপনি। কথা নেই-বার্তা নেই, হর্ন নেই পাশ দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল মোটরবাইক। তার বেপরোয়া চলনে চমকে আপনি হয়তো পড়েই গেলেন!

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৩৯

রাস্তায় সবে পা রেখেছেন আপনি। কথা নেই-বার্তা নেই, হর্ন নেই পাশ দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল মোটরবাইক। তার বেপরোয়া চলনে চমকে আপনি হয়তো পড়েই গেলেন!

সবে ধুলো ঝেড়ে উঠলেন, তো কী কাণ্ড! ভিড়েঠাসা রাস্তায় দুদ্দাড় করে মোটর বাইক ছোটাচ্ছে এক জন। মোটরবাইকে চেপে তাকে টপকে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে আরও দু’-তিন জন। তাদের মুখে নানা রকম শব্দ এবং গালি। সব মিলিয়ে কালনার রাস্তায় যেন ধুম-৪ (‌মোটরবাইক নিয়ে দাপানো মুভি ফ্র্যানচাইজির এখনও তৈরি না হওয়া সংস্করণ)! গত বছর খানেক রাতে কালনা সদর এবং আশপাশে মোটরবাইকের এমন দাপাদাপিতে আতঙ্কিত অনেকে।

১৫০, ২০০, ২২০, ২৫০ সিসির (কিউবিক সেন্টিমিটার) নানা মডেলের দেড় থেকে চার লক্ষ টাকা দামের আধুনিক মোটরবাইক রয়েছে এই চালকদের হাতে। বেশির ভাগ সময়েই তাঁরা নেশাচ্ছন্ন। সাহু সরকার মোড়, সিদ্ধেশ্বরী মোড়, স্টেশন রোড, আমলা পুকুর, ১০৮ শিবমন্দির রোড, ছোটদেউড়ি মোড়ের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এবং শহরের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া এসটিকেকে রোডে সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় মোটরবাইক নিয়ে তুলকালাম। গভীর রাত পর্যন্ত চলে। বিশেষ করে ভিড় থাকা এলাকাতেই এরা চক্কর দেয়। মাথায় কারও হেলমেট নেই।

এমনিতেই কালনা শহরের বেশির ভাগ রাস্তা সরু। তার উপরে ফুটপাথ দখল এবং যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সে সব রাস্তা দিয়ে হাঁটা কঠিন। সেখানে মোটরবাইক নিয়ে এ ধরনের ‘হুজ্জতি’ হাড়ে কাঁপুনি ধরাচ্ছে অনেকের। স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, ‘‘এই সে দিন রিকশায় যাচ্ছি। রিকশার দু’পাশ দিয়ে দুরন্ত গতিতে একে-অন্যকে টেক্কা দিতে দিতে গেল দু’টো বাইক। একটু এগিয়েই আচমকা ব্রেক কষল। তার পরে উল্টো মুখে রিকশাটাকে পেরিয়ে গেল ধাঁ করে। রিকশা চালক না সামলালে বড় বিপদ ঘটতে পারত।’’

এ ভাবে বাইক চালায় কারা?

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯ থেকে ২৫ বছরের কিছু যুবক এই দলে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এঁদের কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ ছোটখাটো কাজ করেন। মোটরবাইক চালানো এঁদের নেশা। আর নেশা করার পরে তুঙ্গে ওঠে মোটরবাইকের গতি।

মদ্যপ অবস্থায় ওই গতিতে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায় ফি দিন ঘটছে। তার পরেও ঝুঁকি নেওয়া কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মোটরবাইক চালকের বক্তব্য, ‘‘অ্যাক্সিলারেটরের মোচড়ে ইঞ্জিনের ক্রমশ বদলে যাওয়া আওয়াজ শোনা, মাথার পাশ দিয়ে হাওয়া কাটার শব্দটা ক্রমশ বেড়ে চলা—এগুলোও আমাদের নেশা।’’ ওই ‘বাইকার’রা জানাচ্ছেন, দিনে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট পরা-সহ নানা ব্যাপারে নজরদারি করে পুলিশ। সে নজর এড়াতেই তারা মোটরবাইক ছোটানোর জন্য রাতকে বেছেছেন। কিন্তু সে বাবে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে আইন ভাঙা বা জীবনের ঝুঁকি নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? এ বার মুখে কুলুপ তাঁদের।

এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা খরচ করে শহরের রাস্তায় আরও গোটা ৮০ সিসিটিভি (‌ক্লোজড সার্কিট) বসানোর পরিকল্পনা করেছে কালনা পুরসভা। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘সিসিটিভিগুলি চালু হলেই বিপজ্জনক ভাবে মোটরবাইক চালানো ছেলেদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।’’ এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায়ের আশ্বাস, ‘‘গতিসীমা ভেঙে মোটরবাইক চালানো বন্ধ করতে রাতে নজরদারি বাড়াব।’’ তিনি জানিয়েছেন, মদ্যপান করে কেউ গাড়ি চালাচ্ছে কি না তা ধরতে, ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ যন্ত্র মহকুমায় আনার চেষ্টা চলছে।

তবে এলাকাবাসীর ধারণা, যত দিন সে সব না হয়, ‘ধুম-৪’ বহাল তবিয়তে চলবে কালনায়।

Bike Racing Motor Bike High Speed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy