Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের হয়ে প্রচার পথে নেমে

ক’দিন আগেই পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের ত্রিলোকচন্দ্রপুরে তৃণমূলের মিছিলে দেখা গিয়েছিল সিপিএমের এক মহিলা প্রার্থীকে। উন্নয়ন দেখে তিনি শাসকদলে সামিল হয়েছেন বলে ওই প্রার্থী জানিয়েছিলেন।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১৩:২৭
মাঝে: গ্রামবাসীর সঙ্গে পাড়া বৈঠকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পূর্বস্থলীর নাদনঘাটে ভোটের প্রচারে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

মাঝে: গ্রামবাসীর সঙ্গে পাড়া বৈঠকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পূর্বস্থলীর নাদনঘাটে ভোটের প্রচারে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কাঁকসার পরে কালনা। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

দু’দিন আগেও যাঁরা বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন, বুধবার তাঁরাই পথে নামলেন তৃণমূলের হয়ে। ভোট চাইলেন শাসক দলের জন্য। শুধু তাই নয়। কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকার ওই তিন বিজেপি প্রার্থী এলাকার ভোটারদের উদ্দেশে লিখিত পত্রে স্বাক্ষর করে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন!

ক’দিন আগেই পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের ত্রিলোকচন্দ্রপুরে তৃণমূলের মিছিলে দেখা গিয়েছিল সিপিএমের এক মহিলা প্রার্থীকে। উন্নয়ন দেখে তিনি শাসকদলে সামিল হয়েছেন বলে ওই প্রার্থী জানিয়েছিলেন। তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আবেদনও প্রকাশ্যে করেছিলেন। সিপিএমের যদিও অভিযোগ ছিল, শাসকদল ‘ভয়’ দেখিয়ে ওই মহিলাকে তাদের দলে যোগদান করিয়েছে। নান্দাইয়ের ঘটনাতেও বিজেপির দাবি, ওই তিন প্রার্থীকে চাপ দিয়ে দলবদল করিয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নান্দাই পঞ্চায়েতের ১৬টি আসন। এ ছাড়াও আছে কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৩টি আসন। মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকেই বিরোধীরা শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে। বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারায় ইতিমধ্যেই নান্দাই পঞ্চায়েতের ৮টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পঞ্চায়েতের বাকি আসনগুলির মধ্যে সাতটিতে বিজেপি এবং একটিতে নির্দল প্রার্থী রয়েছেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যা থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে নান্দাই এলাকায়। নিজের এলাকাতেই তিরের হানায় জখম হন খাঁপুর গ্রামের তৃণমূলের বুথ সভাপতি সেবাশিস সাহা। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি রয়েছে হামলার পিছনে। পুলিশ ওই ঘটনায় চার বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতারও করে। ঘটনার পর থেকে এলাকাছাড়া বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বিজেপি এলাকায় কিছুটা কোণঠাসা হতেই শুরু হয় শাসকদলের তৎপরতা। বুধবার সকালে অনেকেই অবাক হয়ে দেখেন, পঞ্চায়েত সমিতির ১৭ নম্বর আসনের বিজেপি প্রার্থী ঝুমা হালদার, নান্দাই পঞ্চায়েতের আসাননগরের বিজেপি প্রার্থী বাবলু হালদার এবং আশ্রমপাড়ার প্রার্থী অনিতা বিশ্বাসের স্বামী অলোক বিশ্বাস তৃণমূলের পতাকা হাতে প্রচার শুরু করেছেন। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের শাসকদলের প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার কথা বলার পাশাপাশি মিছিলেও হেঁটেছেন। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন এলাকার তৃণমূল নেতা তথা নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা রাজকুমার পাণ্ডে। তাঁর দাবি, ‘‘ওই তিন জনকে নানা ভাবে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি প্রার্থী করেছিল। দেরিতে হলেও ওঁরা ভুল বুঝতে পেরেছেন। যে আসনে ওঁরা দাঁড়িয়েছেন, সেগুলিতে যাতে তৃণমূল প্রার্থীকে মানুষ ভোট দেন, তার জন্য একটি আবেদন পত্রে সইও করেছেন। আমরা আবেদনপত্রটিকে লিফলেট আকারে এলাকায় বিলি করব।’’

মনোনয়ন দিয়েও কেন দলবদল?

উত্তরে দুই বিজেপি প্রার্থী এবং এক প্রার্থীর স্বামীর বক্তব্য, ‘‘প্রথমে আবেগে বিজেপির হয়ে প্রার্থী হয়েছিলাম। পরে উন্নয়নের কথা ভেবেই মত বদলাই।’’ বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ভোটের দিনও রাস্তায় ‘উন্নয়ন’ দেখা যাবে। ঝুমাদেবী অবশ্য বলছেন, ‘‘সেই উন্নয়ন নয়। মুখ্যমন্ত্রী যে উন্নয়ন করেছেন, তাতেই আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি।’’ কোনও ভাবে বিজেপি-র হয়েই ভোটে জিতে গেলে কী হবে? অলোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘সে রকম পরিস্থিতি হয়তো হবে না। হলে তৃণমূলকেই সমর্থন করব!’’

বিজেপি-র অন্যতম রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের অভিযোগ, প্রচার শুরু হয়ে গেলেও তাঁদের প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেউ কি তৃণমূলের হয়ে কাজ করার জন্য বিজেপি-র প্রার্থী হয়? প্রাণভয়েই নান্দাইয়ের তিন প্রার্থী শাসকদলের হয়ে প্রচারে নেমেছেন।’’ যা শুনে নান্দাই অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি কিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এলাকায় কোনও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি। বিজেপি মিথ্যা বলে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে চাইছে।’’ তৃণমূল নেতাদের দাবি, পঞ্চায়েত এলাকায় আরও কয়েকজন বিজেপি প্রার্থী তাঁদের সঙ্গে

যোগাযোগ রেখেছেন।

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy