বছর দুয়েক আগে বিজেপির দু’দিনের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল দুর্গাপুরে। এ বার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার জন্য বেছে নেওয়া হল দুর্গাপুরকে। বিজেপির নানা সূত্রের দাবি, বিধানসভা ভোটের আগে ‘রাঢ়বঙ্গ জ়োন’ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে দলের কাছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমের সাতটি দলীয় সাংগঠনিক জেলা নিয়ে তৈরি এই জ়োনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে তাই গুরুত্ব বাড়ছে দুর্গাপুরেরও।
১৮ জুলাই ডিএসপি টাউনশিপের নেহরু স্টেডিয়ামে সভা করার কথা মোদীর। মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। বিজেপির নানা স্তরের নেতৃত্ব নিয়ম করে প্রস্তুতি-বৈঠক করছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আগামী বছর বিধানসভা ভোটে রাজ্যে ভাল ফল করতে হলে, রাঢ়বঙ্গে বিজেপিকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেতে হবে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই অঞ্চলের ৮টি আসনের মধ্যে ৫টি দখল করেছিল বিজেপি। তবে ২০২১-এর বিধানসভা ভোট বা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সে সাফল্য তারা ধরে রাখতে পারেনি। বিধানসভায় এই অঞ্চলের ৫৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৮টি এবং গত লোকসভা ভোটে ৮টির মধ্যে মাত্র দু’টি আসনে জয় পায় বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে রাঢ়বঙ্গে দলের শক্তি ফেরতে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি হচ্ছে বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। বিজেপি সূত্রের খবর, বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে গোটা দশেক সভা করতে পারেন মোদী। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে একটি সভা করেছেন। দ্বিতীয় সভার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দুর্গাপুরকে।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর বরাবরই দলীয় নেতৃত্বের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায় ভৌগোলিক অবস্থান,উন্নত যোগাযোগ, থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা-সহ নানা কারণে। এখানে সভা হলে বাকি জেলাগুলি থেকে নেতা-কর্মীরা সহজে যাতায়াতকরতে পারেন। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সভায় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার কর্মী-সমর্থকেরা আসবেন। তবেদলের একটি সূত্রের দাবি, বীরভূম ও পুরুলিয়া থেকেও অনেকে সভায় আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে।অন্ডাল বিমানবন্দরে নেমে প্রধানমন্ত্রী শহরে পৌঁছবেন। দলের অন্য নেতারা সভার আগের দিন বিভিন্ন হোটেলে এসে উঠবেন।
বিজেপির একাংশের মতে, দুর্গাপুরে দলের নিজস্ব ‘ভোট ব্যাঙ্ক’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন নেতৃত্ব। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে দুর্গাপুর থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবাদে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়া। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে জেতেন বিজেপির লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। আবার, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বড় ব্যবধানে হারলেও, একমাত্র দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে তিনি ১১,৬৮২ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। তাই শহরে প্রধানমন্ত্রী সভা করলে, মাঠ ভরানো যেমন সুবিধা, তেমনই সংগঠনের প্রসারেও তা সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল যদিও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভা কখনও বিশেষ কোনও এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেখানে যোগ দেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)