Advertisement
E-Paper

রক্তের দালাল চক্রে নাম জড়াল কর্মীরও

ব্লাড ব্যাঙ্কের দেওয়ালে বড় করে লেখা— ‘দালাল হইতে সাবধান!’ কিন্তু কে তার পরোয়া করে? দালাল-রাজ জাঁকিয়ে বসেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ব্লাড ব্যাঙ্কে কোন গ্রুপের কত রক্ত মজুত রয়েছে তা সামনে কোনও জায়গায় প্রকাশ্যে প্রতি দিন বোর্ডে লিখে রাখার নিয়ম। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যালে সেই নিয়ম মানা হয় না। আর সেই সুযোগেই দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০০:৪৮
দর কষাকষি ব্লাড ব্যাঙ্কে। —নিজস্ব চিত্র।

দর কষাকষি ব্লাড ব্যাঙ্কে। —নিজস্ব চিত্র।

ব্লাড ব্যাঙ্কের দেওয়ালে বড় করে লেখা— ‘দালাল হইতে সাবধান!’

কিন্তু কে তার পরোয়া করে? দালাল-রাজ জাঁকিয়ে বসেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

ব্লাড ব্যাঙ্কে কোন গ্রুপের কত রক্ত মজুত রয়েছে তা সামনে কোনও জায়গায় প্রকাশ্যে প্রতি দিন বোর্ডে লিখে রাখার নিয়ম। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যালে সেই নিয়ম মানা হয় না। আর সেই সুযোগেই দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।

শনিবারই এ রকম একটি চক্রের খোঁজ পেয়েছে বর্ধমান থানার পুলিশ। ওই চক্রের সঙ্গে জড়িয়েছে বর্ধমানের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্কের এক প্রবীণ কর্মীর নামও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, সঙ্গে তাঁদের কোনও কর্মী জড়িত নন।

বর্ধমান থানা সূত্রের খবর, জিটি রোডের ধারে উল্লাস মোড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ঝাড়খণ্ডের দ্বারভাঙা এলাকার দু’জন ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের অস্ত্রোপচারের জন্য দুই ইউনিট ‘এ পজিটিভ’ এবং দুই ইউনিট ‘বি পজিটিভ’ রক্ত প্রয়োজন। শুক্রবার স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এক ইউনিট করে রক্ত জোগাড় করেছিলেন ওই রোগীদের আত্মীয়েরা। এ দিন রক্তের খোঁজে তাঁরা বর্ধমান মেডিক্যালে আসেন। সেখানে ব্লাড ব্যাঙ্কে কোনও বোর্ড না থাকায় তাঁরা বুঝতে পারেন নি আদৌ রক্ত মজুত আছে কি না। ব্লাড ব্যাঙ্কেএ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেও তাঁরা সদুত্তর পাননি বলে অভিযোগ।

রোগীর এক আত্মীয় উপেন সহানি বলেন, “যেখানে রোগী ভর্তি রয়েছে, সেখানে ফিরে নানা জনকে রক্তের কথা বলতেই কয়েক জন আমাকে বলে এক ইউনিটের জন্য ২১০০ টাকা (সরকারি দর ১৫০০ টাকা, রক্তদানের কার্ড থাকলে কোনও টাকা লাগে না) করে দিলে রক্তের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমি সেই মতো টাকা দিলে এক যুবক মোটরবাইকে চাপিয়ে আমায় হাসপাতালে নিয়ে আসে।” কিন্তু রক্ত কেনার সময়েই হাতেনাতে ধরা পড়ে ওই যুবক। পুলিশের দাবি, যুবকটি ব্লাড ব্যাঙ্কের এক প্রবীণ কর্মীর নামে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, তাঁর মাধ্যমেই টাকার বিনিময়ে রক্তের প্যাকেট নিয়ে থাকে সে। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই অভিযোগ কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তদন্তের কারণে আমরা এখনই ওই কর্মীর নাম প্রকাশ্যে আনছি না।”

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান মেডিক্যাল ও বিভিন্ন নার্সিংহোম মিলিয়ে বর্ধমান শহরে রোজ গড়ে ৮০ বোতল রক্ত প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ব্লাড ব্যাঙ্কে যথেষ্ট রক্ত মজুত রয়েছে। তার পরেও দালাল চক্রের এত রমরমা কেন? ভুক্তভোগীরা জানান, ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রকাশ্যে কোনও বোর্ড না থাকায় রোগীর আত্মীয়েরা বুঝতেই পারেন না কত রক্ত মজুত আছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের আশেপাশেই দালালেরা ঘুরে বেড়ায়। রক্তের খুব সঙ্কট বলে রোগীর বাড়ির লোকজনকে ভয় দেখিয়ে দাঁও মারে তারা। মেমারির প্রত্যন্ত একটি গ্রামের বাসিন্দা সহদেব রাজোয়ার বলেন, “কয়েক দিন আগে এক আত্মীয়ের জন্য রক্ত আনতে গিয়েছিলাম। এক জন এসে বলল, হাসপাতালে রক্ত নেই বলেই বোর্ড টাঙানো হয়নি। রক্ত জোগাড় করে দিতে পারি, কিন্তু এক ইউনিটের জন্য ২০০০ টাকা দিতে হবে।”

কেন টাঙানো হচ্ছে না বোর্ড?

বর্ধমান মেডিক্যালে ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুদীপ ধীবর দাবি করেন, “আগে বোর্ড লাগানো থাকত। এখন তা ডিজিটাল করার জন্য নতুন একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। খুব শীঘ্র তা লাগানো হবে।’’ দালালদের কথা যে তিনি জানেন তা কবুল করে সুদীপবাবু বলেন, ‘‘এই উৎপাত আগেও ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো আছে। পুলিশ কয়েক জনকে ধরেওছিল।” হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার মতে, “দালাল চক্র ভাঙার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে কি না, যদি থাকে তা হলে সেই ভূত তাড়াতে হাসপাতাল কবে যথেষ্ট সক্রিয় হবে, সেই প্রশ্নের সদুত্তর কিন্তু মেলেনি।

Bardhaman Broker blood bank Bardhaman medical college bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy