Advertisement
E-Paper

আগেই গোঁফে তেল, বলছে গুসকরা

১৯ নয়, এখানে ভাগ্যপরীক্ষার দিন ২৩ মে। তবে প্রশ্নপত্র পাওয়ার আগেই জয়ের উল্লাস দুই শিবিরে।এক পক্ষ ফুলের মালা গলায় রাস্তায় নেমেছেন। আর এক তরফও বাজি ফাটিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা। গুসকরার তৃণমূল পুরপ্রধান ও দলেরই একাংশ কাউন্সিলরের এখন একটাই চিন্তা, গদি কার। আর সে জন্য হাইকোর্টের একটি রায়কে দু’পক্ষই নিজেদের জয় মনে করে ‘উৎসবে’ মেতে উঠেছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:১১
অঙ্কণ: মনীশ মৈত্র।

অঙ্কণ: মনীশ মৈত্র।

১৯ নয়, এখানে ভাগ্যপরীক্ষার দিন ২৩ মে।

তবে প্রশ্নপত্র পাওয়ার আগেই জয়ের উল্লাস দুই শিবিরে।

এক পক্ষ ফুলের মালা গলায় রাস্তায় নেমেছেন। আর এক তরফও বাজি ফাটিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা।

গুসকরার তৃণমূল পুরপ্রধান ও দলেরই একাংশ কাউন্সিলরের এখন একটাই চিন্তা, গদি কার। আর সে জন্য হাইকোর্টের একটি রায়কে দু’পক্ষই নিজেদের জয় মনে করে ‘উৎসবে’ মেতে উঠেছে। দু’তরফের লক্ষ্য, মূল যুদ্ধের আগে কর্মীদের চাঙ্গা রাখা। যাতে ২৩ তারিখ সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানো যায়।

এত দিন দু’পক্ষের আকচা-আকচি, মারামারি দেখে অভ্যস্ত গুসকরার মানুষ ফলের আগেই উল্লাস দেখে অবাক। তাঁদের অনেকেরই মত, ‘এ পুরো গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।’ আবার অন্যরা বলেন, ‘এ তো রাম জন্মানোর আগেই রামায়ণ লেখা।’ তবে রাম জন্মাক বা না জন্মাক আসন্ন রা-রাবণের যুদ্ধের কথা ভেবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরে।

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে— আগামী ২৩ মে পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করাতে হবে পুরপ্রধান-বিরোধী কাউন্সিলরদের। প্রস্তাব পাশ হলে জেলাশাসক বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নতুন পুরপ্রধান নির্বাচিত করা হবে ওই দিনই। এই রায়ের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই গুসকরা স্কুল মোড়ে বাজি ফাটিয়ে, আবির খেলে আনন্দ করতে দেখা যায় পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় ও তাঁর অনুগামীদের।

শোনা যায়, তৃণমূল নেত্রী মল্লিকা চোঙদার প্রকাশ্যে পুরপ্রধানকে লাড্ডুও খাইয়ে দিয়েছেন। এমনকী, পথচলতি আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকেও লাড্ডু বিলি করা হয়েছে। লাড্ডু হাতে নিয়ে অনেকই ভেবেছেন, এ বোধহয় ১৯ তারিখের আগাম উদযাপন। দু’এক জন প্রশ্নও করেন, ‘‘আউশগ্রাম বিধানসভার ফল কী স্পেশ্যাল ভাবে বের করে দিল নির্বাচন কমিশন? তাতে কী তৃণমূল জিতে গিয়েছে?” তাতে মুচকি হেসে পুরপ্রধানের অনুগামীরা বলেন, “আরে, নিতাইদারা আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল, তাতে হেরে গিয়েছে। সে জন্যই তো এত আনন্দ।”

ঘটনা হল, গুসকরাবাসীর ‘নিতাই দা’ (তৃণমূলের প্রবীণ কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়) হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জানিয়েছিলেন, গত ৫ এপ্রিল পুরসভা ভবনে তলবি সভায় ১০ জন কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। ফলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুরপ্রধান পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন বুর্ধেন্দু রায়। তবে তারপরেও জোর করে ওই পদে রয়েছেন তিনি। তাঁকে অপসারণ করার জন্য জেলা ও মহকুমা প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও তাঁর অভিযোগ। এর প্রেক্ষিতেই গত মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় রায়ে দেন, আবেদনকারীদের আগামী ২৩ মে নতুন করে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। এবং সে দিনই জেলাশাসক বা তাঁর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পুরপ্রধান নির্বাচিত করতে হবে।

এ দিকে, রায়ে আগের সভা বাতিল হয়ে যাওয়াকে নিজেদের জয় বলে ধরে নিয়েছেন বুর্ধেন্দু রায়ের অনুগামীরা। পুরপ্রধানেরও পাল্টা দাবি, “আমাদের দাবি মতো ওই সভা বাতিল করাটাই তো জয়ের একটা ধাপ এগিয়ে যাওয়া। সে জন্য আমাদের কিছু অনুগামী উৎসাহিত হয়ে আনন্দ করেছে।” তবে চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন নিত্যানন্দও। জানা যায়, কলকাতা থেকে ফিরে বিপক্ষের উল্লাসের খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থআ করে ফেলেন তিনি। তাঁর অনুগামীদের স্টেশনে ২টি ঢাক ও মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। তিনি নামতেই তাঁকে মালা পরানো হয়। তারপর ঢাক বাজিয়ে গুসকরা স্টেশন এলাকা ও বাজার এলাকায় মিছিল করে তাঁরা। নিত্যানন্দবাবুর অনুগামী রাখী মাজি বলেন, “ওরা বাজি ফাটিয়ে, লাড্ডু বিলি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। আমরা যুদ্ধ জয়ের নায়ককে নিয়ে মিছিল করে গুসকরাবাসীকে জানিয়ে দিলাম সত্যিটা কী।”

আর নিত্যানন্দবাবু বলেন, “মানুষের এত উৎসাহ দেখে আমি তো অবাক। গুসকরাবাসীর আবেগই বলে দিচ্ছে, ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে।” বুর্ধেন্দুবাবুও বলেন, “ভবিষ্যৎটা তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সেই আশঙ্কাতেই তো ওদের এত হইচই।”

আর স্টেশনের পাশে চায়ের দোকানে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে গুসকরার কয়েকজন বলেন, “গোটা রাজ্য বিধানসভার ফল নিয়ে আলোচনা করছে, আর আমরা তৃণমূলের দুই শিবিরের কান্ড কারখানা দেখছি। ভালই জমেছে।’’

TMC candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy