শহর সাফ রাখতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় কেনা হয়েছিল আধুনিক গাড়ি। কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে ৩৫টি গাড়ি আবর্জনা সাফাইয়ে লাগানো হবে, এমনটাই পরিকল্পনা হয়েছিল বছর কয়েক আগে। কিন্তু সেই সব গাড়ি কোথায়, এখন খুঁজে বের করতে হচ্ছে পুর কর্তৃপক্ষকে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হতেই খোঁজ পড়েছে সেগুলির। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে যে অবস্থায় গাড়িগুলি রয়েছে সেখান থেকে অবিলম্বে পুরসভা চত্বরে গাড়িগুলি নিয়ে আসতে হবে। কেন সেগুলি ব্যবহার করা হয়নি, সেই তদন্তও করা হবে বলে জানান তিনি।
জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) আওতায় সাবেক কুলটি পুরসভার জন্য ২০০৬ সালে হাইড্রলিক যন্ত্র-যুক্ত ৩৫টি ছোট গাড়ি কেনার অনুমোদন আসে। প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচে তৎকালীন কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলি কেনেন। কথা ছিল, প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে গাড়ি রাখা হবে। ওয়ার্ডের বিভিন্ন প্রান্তের জঞ্জাল গাড়িতে বোঝাই করে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। এর তত্ত্বাবধানে থাকবেন কাউন্সিলররা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের নিয়ম মতো কেন্দ্রীয় সরকারের এই টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৩৫টি ওয়ার্ডে গাড়ি পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক দিনের জন্যও সেগুলি জঞ্জাল সাফাইয়ে ব্যবহার করা হয়নি।
আসানসোলের সঙ্গে কুলটি-সহ তিন পুর এলাকা যুক্ত করে পুরনিগম গঠনের পরে নতুন বোর্ডের সভায় ওই সাফাই-গাড়ি নিয়ে অভিযোগ জানাতে শুরু করেন কুলটি এলাকার বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর। তাঁরা দাবি জানান, সরকারি প্রকল্পের টাকায় কেনা গাড়িগুলি খুঁজে বের করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি সরব হন ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অভিজিৎ আচার্য। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কয়েকজন কাউন্সিলর নিজেদের কাজে গাড়িগুলি ব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ ভাড়া খাটিয়েছেন। কিন্তু এলাকার জঞ্জাল সাফাইয়ে ব্যবহার করা হয়নি।’’ সিপিএম নেতা প্রিয়ব্রত সরকারের অভিযোগ, ‘‘ভাল কাজের জন্য গাড়িগুলি কেনা হয়েছিল। কিন্তু পুরসভার গাফিলতির জন্য সেগুলি ঠিক কাজে ব্যবহার করা যায়নি।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নজরে আসতেই আধিকারিকদের গাড়িগুলির হদিস করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র জিতেন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি গাড়ির হদিস মিলেছে। সেগুলি পুরসভায় আনা হয়েছে। বাকিগুলির খোঁজ চলছে। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পুরসভার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি প্রকল্পের টাকা এ ভাবে অপচয় ভাল চোখে দেখছেন না নতুন পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। কী কারণে গাড়িগুলি ব্যবহার করা হলা না, মেয়র তার তদন্ত শুরু করেছেন। পুরসভার সাফাই দফতরের কোনও কর্মীর গাফিলতি মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন মেয়র।
গাড়িগুলি ব্যবহার করা হল না কেন? কুলটি পুরসভার সেই সময়ের কর্তাদের দাবি, গাড়িগুলি কাউন্সিলরদের দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন কাউন্সিলররা কেন ব্যবহার করেননি, তা তাঁদের জানা নেই। তবে পুরসভার এক আধিকারিক দাবি করেন, এমনিতে শহরের জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য পুর কর্তৃপক্ষ বরাবর ঠিকা প্রথায় লরি নিতেন। অভিযোগ, লরিগুলির বেশির ভাগই শাসক দলের কাউন্সিলররা নিকট আত্মীয়দের নামে সরবরাহ করতেন। অথবা, সাফাই দফতরের ক্ষমতাশালী কর্মী-আধিকারিকরা বকলমে চালাতেন। ফলে, আধুনিক সাফাই-গাড়িগুলি চালানো হলে ওই লরি নেওয়া বন্ধ করতে হতো। কুলটি পুরসভা দফতরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় ২০ ভাঙাচোরা গাড়ি চত্বরে এনে জড়ো করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকি ১৫টি গাড়ির এখনও কোনও হদিস মেলেনি।