দু’দলের প্রচারেই জোর কলেজে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবার ভোট এলেই সঙ্গে আসে কলেজ তৈরির আশ্বাস। তারপর ভোট মিটে গেলে সমস্ত না পাওয়া নিয়ে দাঁইহাট পড়ে থাকে দাঁইহাটেই। পনেরো বছর ধরে এটাই যেন নিয়ম এ শহরের।
এ বারও পুরভোটের বাদ্যি বাজতেই কলেজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। দেওয়াল লিখন থেকে পথসভা সবেতেই কলেজ তৈরি না হওয়া নিয়ে একে অপরকে দুষছে তারা। আর দাঁইহাটের বাসিন্দারা চাইছেন, এ সব আকচা-আকচি বাদ দিয়ে কলেজটা যাতে তৈরি হয়, তার জন্য ঝাঁপাক সব দল।
দাঁইহাটে হৃষিকেশ মিত্র মেমোরিয়াল কলেজ তৈরির জন্য ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই সময়েই দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের নামে ৬ বিঘা জমি দান করে। ২০০০ সালে পুরভোটের সময় প্রধান তিন রাজনৈতিক দলই কলেজ তৈরির দাবি নিয়ে পথে নামে। প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় এলে তাঁরা দাঁইহাটে কলেজ তৈরির জন্য বিশেষ উদ্যোগ করার। ২০০৫ সালের পুরভোটের আগেও ফের কলেজ তৈরি নিয়ে আসরে নামে তৎকালীন সিপিএম পরিচালিত দাঁইহাট পুরবোর্ড। ভোটে সিপিএম হেরে যাওয়ার পরে কলেজ তৈরির প্রস্তাবও চাপা পড়ে যায়। ফের ২০১০ সালে পরিযায়ী পাখির মতো ভোটের বাজারে উড়তে থাকে কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি। এরপরে ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে ২৮ জুলাই শিক্ষা দফতরের সহ-সচিব কে সি আচার্য কলেজ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শিক্ষা দফতরে জমা দেওয়ার জন্য দাঁইহাটের পুরপ্রধানকে চিঠি দেন।
ওই চিঠি পাওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পরে, ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর পুরবোর্ডে কাউন্সিলরদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে পুরসভা সূত্রে জানা যায়। ওই বছরেরই ১৪ নভেম্বর দাঁইহাটের কংগ্রেস পুরপ্রধান সন্তোষ দাস কলেজের প্রয়োজনে উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছ থেকে সবরকম সাহায্য চেয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদককে চিঠি দেন। তিনদিন পর, ১৭ ডিসেম্বর দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি বিশেষ সভায় ঠিক হয়, পুরসভার উদ্যোগে কলেজ তৈরির জন্য যে প্রস্তুতি চলছে তাতে সব রকমের সাহায্য করা হবে। এর জন্য আরও ৯ বিঘা জমি দান করা হবে বলেও পুরসভাকে জানানো হয়। পুরপ্রধান সন্তোষ দাসকে কলেজের সম্ভাব্য পরিচালন সমিতির সম্পাদক করে ১৪ জনের একটি কমিটি তৈরি হয়। ওই পরিচালন সমিতির সদস্যরা জানান, ৯ বিঘা জমির রেজিস্ট্রি খরচ দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। ওই টাকা জোগাড়ে বছর দেড়েক পেরিয়ে যায়। অবশেষে ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজের নামে জমি দান করে দাঁইহাট উচ্চবিদ্যালয়। পরে গত বছর কলকাতার হাজরা রোডের বাসিন্দা শ্যামলেন্দু মিত্র ওই কলেজ তৈরির জন্য কুড়ি লক্ষ টাকা দান করেন। চলতি বছরের গোড়ায় উচ্চশিক্ষা দফতর ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধি দল কলেজের জায়গা সহ অন্যান্য বিষয় ঘুরে দেখে যায়। পুরপ্রধান সন্তোষ দাস বলেন, “শিক্ষা দফতরের সমস্ত নিয়মকানুন মেনে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারপরেও রাজ্য সরকার কেন কলেজ তৈরির অনুমোদন দিচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।”
যদিও দাঁইহাটের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএম প্রার্থী বিদ্যুৎ ভক্তর অভিযোগ, “গত পাঁচ বছর ধরে কলেজ তৈরি নিয়ে কংগ্রেস আর তৃণমূল দাঁইহাটের মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে যাচ্ছে। কলেজ তৈরির উদ্যোগ আমাদের সময়েই হয়েছিল। সে কথাই প্রচারে তুলে ধরছি আমরা।” কলেজ তৈরির প্রশ্নে তৃণমূলের অন্দর থেকেও শওনা যাচ্ছে দু’রকম মত। দাঁইহাটের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ্ত রায় বিভিন্ন সভায় বলছেন, “তৃণমূল ক্ষমতায় এলেই দাঁইহাটে কলেজ তৈরি হবে। সমস্ত কাগজপত্র শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে রয়েছে।” আবার আর এক তৃণমূল নেতা সুমন দাসের দাবি, “দাঁইহাট উচ্চবিদ্যালয় কলেজ তৈরির জন্য যে ১৫ বিঘা জমি দান করেছে, তার মধ্যে চার বিঘা জলা জায়গা। তাই কলেজ তৈরির অনুমোদন আটকে যাচ্ছে।” পুরপ্রধান এ নিয়ে সরাসরি মুখ না খুললেও, দাঁইহাটের কংগ্রেসের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রাধানাথ ভট্টাচার্যের দাবি, “তৃণমূলের কথাবার্তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে তাঁদের একাংশ কলেজ তৈরি হোক চাইছেন না। তাছাড়া কংগ্রেসের পুরবোর্ড হওয়ায় তৃণমূলের সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশেও দাঁইহাটে কলেজ তৈরির অনুমোদন আটকে রেখেছে। এর জবাব মানুষ দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy