এই স্বীকৃতি পেলে কলেজের পরিকাঠামোর উন্নতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে মোটা অঙ্কের অনুদান মেলে। কিন্তু ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের (নাক) অনুমোদনের জন্য আবেদনই করেনি বহু কলেজ। আবার বেশ কয়েকটি কলেজ আবেদন করলেও তথ্যগত ভুল থাকায় তা বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
১৯৮৬ সালে তৈরি জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ‘নাক’ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে তৈরি হয় নাক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম অনুসারে, বর্তমানে ‘নাক’-এর স্বীকৃতি থাকাটা কলেজের ক্ষেত্রে কার্যত বাধ্যতামূলক। এই স্বীকৃতি থাকলে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কলেজ সুবিধে পেতে পারে। এক, ইউজিসি থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধে পেতে কলেজের এই স্বীকৃতি থাকা বাধ্যতামূলক। দুই, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে গঠিত ‘রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান’ (রুসা) প্রকল্পে টাকা পেতেও এই স্বীকৃতি থাকতে হয়। এই প্রকল্পে কলেজগুলি সরাসরি ২ কোটি টাকা পর্যন্ত পেতে পারে। তিন, এই স্বীকৃতি থাকলে আন্তঃপ্রতিষ্ঠান যোগাযোগ বাড়ে। চার, ‘নাক’-এর রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানাতে পারেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা ‘নাক’-এর কলেজ পরিদর্শক কমিটির সভাপতি স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “এই স্বীকৃতি কলেজগুলিকে নিতেই হবে। যত দ্রুত তা মেলে, ততই লাভ।”
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রুসা প্রকল্পের টাকা পেয়েছে কলকাতা ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্তর্গত বেশির ভাগ কলেজ টাকা পাওয়া তো দূরঅস্ত, স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ‘নাক’-এর কাছে আবেদনই করেনি। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যে ৬০০টির মতো কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৭৫টি কলেজ নাকের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বছর ১২৭টি কলেজ আবেদন করেছে।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হুগলি মহসিন গভর্মেন্ট কলেজ, রাজ কলেজ, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রানিগঞ্জ টিডিবি বা আসানসোলের বিসি কলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির এই স্বীকৃতি নেই। কলকাতার বিভিন্ন নামী কলেজগুলিরও একই হাল। মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ তপন কার্ফার যদিও দাবি, ‘‘আমরা আবেদন করেছিলাম। বাকিটা ডিপিআই বলতে পারবেন।’’ ডিপিআই নিমাই সাহা অবশ্য বলেন, “তথ্যগত ভুলে হুগলির ওই কলেজে সমস্যা হয়েছে। বাকি কলেজগুলিও ধীরে ধীরে আবেদন করছে।”
একই হাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও। সেখানে আবার কোনও নির্দিষ্ট নথিই নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “অনেক কলেজ আগে ‘নাক’ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। অনেক কলেজ এ বার প্রথম আবেদন করেছে। আবার বেশ কিছু কলেজ এখনও আবেদন করেনি। সম্পূর্ণ তথ্য আমাদের কাছে এখনও নেই।”
কিন্তু আবেদন অনীহা কেন?
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে গেলে ‘সেল্ফ স্টাডি রিপোর্ট’ অনলাইনে আপলোড করে ‘লেটার অফ ইনটেন্ট’ (এলওআই) নিতে হয় কলেজগুলিকে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ইউজিসি-র নির্দেশিকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে গত বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এলওআই নিতে বলা হয় কলেজগুলিকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরনোর পরেও কলেজগুলির টনক নড়েনি। পরে ফের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলেও ছবিটা বদলায়নি বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। এ ছাড়া ‘নাক’-এর পরিদর্শকদল কলেজে এলে তাঁরা অডিট রিপোর্ট, কলেজের প্রতিদিনের পরিচালনা, শিক্ষকদের বায়োডাটা প্রভৃতি খতিয়ে দেখেন। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের দাবি, দৈনন্দিন কাজের বাইরে গিয়ে ওই সব রিপোর্ট তৈরি করা কার্যত সম্ভব হয় না বলে শেষ পর্যন্ত আর আবেদন করা হয় না।
এই পরিস্থিতিতে ‘নাক’-এর সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের প্রতিনিধিরাও আক্ষেপ চেপে রাখছেন না। স্মৃতিকুমারবাবুর কথায়, “দেশের বিভিন্ন কলেজে গিয়েছি। আমাদের তুলনায় ভিন্ রাজ্যের কলেজগুলির পরিকাঠামো খারাপ হলেও ‘নাক’-এর স্বীকৃতি নিয়ে তাদের উৎসাহ রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy