Advertisement
E-Paper

সালিশিতে গরহাজির, পিটিয়ে খুন 

 গ্রামের মহিলাকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ডাকা হয়েছিল সালিশি সভায়। কিন্তু যেতে রাজি হননি অভিযুক্ত প্রৌঢ়। সেই ‘অপরাধে’ রাতে বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল গ্রামের কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
ঘটনাস্থল: এখানেই মারধর করা হয় প্রৌঢ়কে। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: এখানেই মারধর করা হয় প্রৌঢ়কে। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের মহিলাকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ডাকা হয়েছিল সালিশি সভায়। কিন্তু যেতে রাজি হননি অভিযুক্ত প্রৌঢ়। সেই ‘অপরাধে’ রাতে বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল গ্রামের কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

সোমবার রাতে কাটোয়ার সাহেবডাঙা গ্রামে মোড়লের নির্দেশেই নরেন মুর্মু (৫০) নামে ওই ব্যক্তিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। মো়ড়ল জ্যোতিষ হাঁসদা-সহ দশ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী সুখী মুর্মু। পুলিশ জানায়, সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মোড়ল পলাতক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রামে গোলমালের সূত্রপাত শনিবার। সে দিন রেশনের চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন গ্রামের এক মহিলা। সেই সময়ে রাস্তা আটকে নরেনবাবু কটূক্তি করেন বলে তাঁর অভিযোগ। বাড়ি ফিরে সে কথা জানালে তাঁর স্বামী গ্রামের মোড়লের কাছে নরেনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। বিষয়টি মীমাংসার জন্য সোমবার বিকেলে গ্রামের ধোবাপুকুর পাড়ে সালিশি সভা ডাকেন মোড়ল। কিন্তু নরেনবাবু সেখানে হাজির হননি।

অভিযোগ, রাত ১০টা নাগাদ গ্রামের এক যুবক নরেনবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়। জোর করে সালিশিসভায় নিয়ে যেতে চাইলে তিনি হাঁসুয়া নিয়ে ওই যুবককে তাড়া করেন। সুখীদেবী অভিযোগ করেন, এর পরেই মোড়ল দলবল জুটিয়ে বাড়িতে হাজির হন। সালিশিতে যেতে অস্বীকার করায় তাঁর স্বামীকে মারধর শুরু হয়। লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক মারে পরে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উঠোনে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা। রাতে পুলিশ উদ্ধার করে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েই মৃত্যু হয় নরেনবাবুর।

এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নরেনবাবুর বাড়ির সামনে ইট, ভাঙা সাইকেল পড়ে রয়েছে। কিছু জায়গায় চাপ-চাপ রক্ত। সুখীদেবী বলেন, ‘‘আমার সামনেই রড, তির দিয়ে মেরে ফেলল স্বামীকে।’’ নরেনবাবুর এক ছেলে। তিনি বাইরে থাকেন। নিহতের আত্মীয়া নন্দিতা মুর্মুর দাবি, সালিশিতে গেলেই পাঁচশো টাকা জরিমানা দিতে হয়। তা না থাকায় নরেনবাবু যেতে চাননি। সালিশিতে শুধু নিজেদের গ্রাম নয়, লাগোয়া ডাকবাংলো গ্রামের লোকজনকেও ডাকা হয়েছিল বলে তাঁদের দাবি।

ঘটনার পর থেকেই পলাতক মোড়ল। তাঁর ছেলে সানি হাঁসদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোড়লের স্ত্রী মনিদেবীর দাবি, স্বামী নরেনবাবুকে ডাকতে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মারধর করেননি বা কোনও নির্দেশও দেননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘নরেন প্রায়ই গ্রামের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতেন। অন্যের বাড়িতে উঁকিঝুঁকি দিতেন। বারণ করা হলেও শুনতেন না।’’

কাটোয়ার জানকীলাল শিক্ষাসদনের শিক্ষক চণ্ডী হাঁসদা বলেন, ‘‘আদিবাসী সমাজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক বা কোনও সমস্যা মেটানো, সব কিছুতেই মোড়লদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার রীতি রয়েছে। তবে কাউকে হেনস্থা বা মারধরের নিদান দেওয়া অবৈধ।’’ এমন ঘটনা আটকাতে এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হবে বলে জানান স্থানীয় শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার।

Beaten To Death Harassment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy