E-Paper

ঢিলে নজরের ফাঁক গলেই কি আনাগোনা

ভিন্‌ রাজ্য থেকে অস্ত্র ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠছে বার বার। কোন পথে আসতে পারে অস্ত্র? সেখানে নজরদারির কী হাল?

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৩৭

— প্রতীকী চিত্র।

দৃশ্য ১: কুলটির ডুবুরডিহি চেকপোস্ট। সকাল সাড়ে ১০টা, দুই পুলিশ অফিসার জনা কয়েক সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা গাড়ি তল্লাশি করছেন।

দৃশ্য ২: সালানপুরে কল্যাণেশ্বরী নাকা পয়েন্ট। সকাল সওয়া ১১টা। চৌকিতে বসে রয়েছেন এক জন পুলিশ কনস্টেবল। ঝাড়খণ্ড থেকে বিনা বাধায় ঢুকছে গাড়ি।

দৃশ্য ৩: সালানপুর মাইথন চেক পয়েন্ট। সকাল পৌনে ১২টা। পুলিশের দুই কর্মী ও তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে মাইথন হয়ে অবাধে ঢুকছে গাড়ি।

দৃশ্য ৪: রূপনারায়ণপুরে বিহার রোড টোল পয়েন্ট। দুপুর সাড়ে ১২টা। পুলিশের চৌকিতে কোনও পুলিশকর্মীর দেখা মেলেনি। নেই নজরদারিও। ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলি টোল কেটে অবাধে বাংলায় ঢুকছে।

দৃশ্য ৫: বারাবনির রুনাকুড়া ঘাট। দুপুর আড়াইটে। সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশকর্মীরা ঝাড়খণ্ড থেকে আসা গাড়ি পরীক্ষা করছেন।

একের পর এক অস্ত্র উদ্ধার ও সম্প্রতি কলকাতায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের উপরে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় বিচলিত রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা। পুলিশের দিকে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সীমানা পেরিয়ে এত অস্ত্র ও দুষ্কৃতীরা ঢুকছে কী ভাবে। আন্তঃরাজ্য সীমানায় পুলিশি নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কোনও কোনও নেতা।

তাঁদের অভিয়োগ কিছুটা হলেও যে ঠিক, তার প্রমাণ মিলেছে পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন সীমানাবর্তী অঞ্চলে গিয়ে। এই জেলায় বাংলা-ঝাড়খণ্ডের মধ্যে যাতায়াতের জন্য আটটি সীমানা রয়েছে। চিত্তরঞ্জনের ১ ও ৩ নম্বর গেটে আরপিএফের পাহারা রয়েছে। বাকি রূপনারায়ণপুরের বিহার রোড, কুলটির ডুবুরডিহি, বরাকরের বেগুনিয়া, বারাবনির রুনাকুড়া ঘাট, কল্যাণেশ্বরী ও মাইথনে রাজ্য পুলিশের নজরদারি চলছে। এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, কুলটির ডুবুরডিহি ও বারাবনির রুনাকুড়া ঘাটের চেক পয়েন্টে পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে। অন্য চারটিতে পরিস্থিতি কিছুটা যেন ঢিলেঢালা।

জেলার গুরুত্বপূর্ণ সীমানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বরাকরের বেগুনিয়া চেক পয়েন্ট। সম্প্রতি এখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, মোতায়েন থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারেরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন। সীমানা পেরিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে ছোট-বড় গাড়ি। ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, মুঙ্গের, মিহিজাম, নারায়ণপুর অঞ্চল দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য বলে পুলিশের খাতায় পরিচিত। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা ধরা পড়েছে নানা সময়ে। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বেশির ভাগ এই সব এলাকা থেকেই সরবরাহ হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। রূপনারায়ণপুরে বিহার রোডে টোল পয়েন্ট লাগোয়া সীমানা থেকে এই এলাকাগুলির দূরত্ব কম-বেশি ৫০ কিলোমিটার। সেখানে যতটা কড়া নজরদারির প্রয়োজন, তা দেখা যায় না বলে আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ।

যদিও ঝাড়খণ্ড সীমানায় কড়া নজরদারি চলছে বলে দাবি করেছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। ডিসিপি (পশ্চিম) সন্দীপ কাররা বলেন, ‘‘প্রত্যেক পয়েন্টে পুলিশি নজরদারি রয়েছে। এলাকায় সিসি ক্যামেরাও বসানো আছে। পুলিশ তা মনিটরিং করে।’’ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রূপনারায়ণপুরে ১৬৭টি ও বরাকর সীমানা লাগোয়া এলাকায় প্রায় ৩১৭টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ডিসিপি (পশ্চিম) আরও দাবি করেন, সীমানা এলাকায় পুলিশের গাড়ি টহল দেয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১৭টি নাকা পয়েন্ট করা হয়েছে।

তবু অস্ত্র কী ভাবে ঢোকে?

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal Weapons Asansol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy