রান্নার গ্যাসের বায়োমেট্রিক করাতে লাইন। বর্ধমানের রানিসায়রে পশ্চিম এলাকায়। ছবি: উদিত সিংহ।
ঘটনা ১: আধার কার্ড নিয়ে গিয়ে আঙুলের ছাপ না মেলালে রান্নার গ্যাসে (এলপিজি) ভর্তুকি মিলবে না জানার পরে বুধবার কোর্ট কম্পাউন্ডের ডিলারের কাছে ছুটে এসেছিলেন এক বৃদ্ধা। বর্ধমান শহরের সাধনপুর এলাকায় বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। কিন্তু এসে শোনেন, গ্যাসের পাইপ (সুরক্ষা) না নিলে বায়োমেট্রিক হবে না।
ঘটনা ২: খোসবাগানে একটি গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার সামনে দাঁড়িয়ে একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে পাইপ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু পাইপ কেনার বিল দেওয়া হচ্ছে না। পাইপ কিনলে তবে বায়োমেট্রিক করার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকেরা।
শুধু ওই দু’টি সংস্থার ডিলার নন, শহর ও আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৫০ জন গ্যাস-সরবরাহকারী ডিলারেরাই একপ্রকার গ্রাহকদের গ্যাসের পাইপ নিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ। গ্রাহকদের দাবি, প্রয়োজন না থাকলেও ১৯০ টাকা দিয়ে পাইপ নিতে হচ্ছে। বুধবার কোর্ট কম্পাউন্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে ইয়াসিন শেখ, সমীর দাসরা অভিযোগ করেন, “আধার সংযোগ ও বায়োমেট্রিকের জন্য সকাল ৬টা থেকে লাইন দিয়েছি। ১১টার সময় অফিস খোলার পরে বলা হচ্ছে, পাইপ নেওয়ার প্রমাণ দেখানোর পরে বায়োমেট্রিক হবে। আবার পাইপ নেওয়ার দিনই বায়োমেট্রিক হচ্ছে না। পরের দিন আসতে হচ্ছে। হয়রানির সীমা নেই।’’ অর্থ, সময় দুইয়েরই অপচয় হচ্ছে, দাবি তাঁদের।
ওই সব গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা অবশ্য গ্রাহকদের অভিযোগ মানতে চায়নি। ম্যানেজার অতীশ সিংহ রায়, শিবনাথ মিত্র, দেবাশিস মিত্ররা বলেন, “তেল সংস্থার নির্দেশ রয়েছে, পাঁচ বছর অন্তর গ্যাসের পাইপ গ্রাহককে বদলাতে হবে। সেই মতো আমরা গ্রাহকদের কাছে আবেদন করছি। এর সঙ্গে বায়োমেট্রিকের কোনও সম্পর্ক নেই। কাউকে পাইপ নেওয়ার জন্য জোরও করছি না।” বায়োমেট্রিক আপডেটের সঙ্গে নতুন সিলিন্ডার নেওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলেও জানান তাঁরা।
কাঞ্চননগরের শ্যামসুন্দর হেস, রাণীসায়র পশ্চিম পাড়ের আশিস মজুমদার, ইন্দ্রকাননের কৌশিক রায়দের কথায়, “নোটবন্দির সময় থেকে লাইনে দাঁড়ানো শুরু হয়েছে। কাজ ছেড়ে লাইনে দাঁড়ানোর পরে শুনছি, লিঙ্ক নেই।” গ্রাহকদের একাংশের ক্ষোভ, এতবার পরীক্ষা কেন, সব সময়ে লাইনেই বা দাঁড়াতে হবে কেন। বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার সময়েই বায়োমেট্রিক করানো যেত বলে দাবি করেছেন তাঁরা। বায়োমেট্রিক করার জন্য ডিস্ট্রিবিউটর বা ডিলাররা সরাসরি কিছু গ্রাহকদের জানাচ্ছেন না বলেও তাঁদের দাবি।
পূর্ব বর্ধমানে সাড়ে ২০ লক্ষ এলপিজি গ্রাহক রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে, এ মাসের মধ্যেই ভর্তুকিযোগ্য রান্নার গ্যাসের সব গ্রাহকের আধার যাচাইয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এত কম সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের তথ্য যাচাই সম্ভব কি না, তা নিয়েও গ্রাহক ও ডিলারেরা সংশয়ে। সময় যত ঘনিয়ে আসবে, লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতীক্ষা থেকে বিভ্রান্তির মতো নানা দুর্ভোগ বাড়ারও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
শক্তিগড়ের একটি গ্যাস সংস্থার তরফে রাজীব ভৌমিক, কার্জন গেটের একটি সংস্থার ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বিশ্বাসদের দাবি, “গ্রাহকদের লম্বা লাইন পড়ছে। বাড়তি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। যাঁরা আসতে পারছেন না, তাঁদের বাড়ি গিয়ে বায়োমেট্রিক করা হচ্ছে।”
গ্রামের অনেক ডিলার দূরবর্তী গ্রাহকদের জন্য নানা জায়গাতে শিবির করছেন বলেও জানা গিয়েছে। আদালত চত্বরে একটি সমবায় সমিতির কর্তার দাবি, “আমাদের ৪২ হাজার গ্রাহক। কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই এ ভাবে কয়েক দিনের মধ্যে তথ্য যাচাই সম্ভব নাকি? সময় বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy