Advertisement
E-Paper

পদ গেল গোলাম, সুরেমানের

নানা অভিযোগ ছিলই। কিন্তু দলেরই এক নেতা তোলাবাজির অভিযোগ করায় পদ খোওয়াতে হল বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিসকে। পদ খোওয়ালেন অভিযোগকারী নিজেও। মঙ্গলবার দুপুরে দলের উপমহলের নির্দেশে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু গোলাম জার্জিসকে কর্মাধ্যক্ষ থেকে সরিয়ে দেন। আপাতত ওই দফতরের দায়িত্ব তিনিই সামলাবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:৩৪

নানা অভিযোগ ছিলই। কিন্তু দলেরই এক নেতা তোলাবাজির অভিযোগ করায় পদ খোওয়াতে হল বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিসকে। পদ খোওয়ালেন অভিযোগকারী নিজেও।

মঙ্গলবার দুপুরে দলের উপমহলের নির্দেশে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু গোলাম জার্জিসকে কর্মাধ্যক্ষ থেকে সরিয়ে দেন। আপাতত ওই দফতরের দায়িত্ব তিনিই সামলাবেন। সঙ্গে গোলাম জার্জিসের বিরুদ্ধে যিনি বর্ধমান থানায় ও দলের কাছে তোলাবাজির অভিযোগ করেছিলেন, সেই শেখ সুরমান আলিকেও তৃণমূলের শাখা সংগঠন জেলা সংখ্যালঘু সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ বার ভোটে ভাল ফলের পরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও বর্ধমানে দলের কোন্দল যে থামছে না, তোলা চাওয়ার অভিযোগে সামনে এসে গিয়েছিল তা। এ বার দু পক্ষকেই সরিয়ে দিয়ে দলের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হল বলেও মনে করেছেন অনেকে। এ দিন জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “গোলাম জার্জিসের ব্যাপারে যা বলার সভাধিপতি বলবেন। আর দলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস সংখ্যালঘু সভাপতি পদ থেকে ওনাকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন এই নির্দেশ তা আমার জানা নেই।”

আর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ হাজরা চৌধুরীকে পাশে বসিয়ে সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “দলের নির্দেশে মঙ্গলবার থেকেই জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের দায়িত্ব আমি নিলাম। জেলাশাসক তথা জেলা পরিষদের নির্বাহী আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী ফোন করে সভাধিপতিকে ওই নির্দেশ দেন। গোলাম জার্জিস শুধু বলেন, “দলের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব।” আর সুরমান আলি বলেন, “দলের নির্দেশ মত আমি ইস্তফা দেব।”

পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় শক্তিগড়ে তৃণমূলের বিজয় মিছিল নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, বোমাবাজি হয়। গোলামের অনুগামী ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যেই গোলমাল বাধে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। ঘটনার পরে এক দল লোক শক্তিগড় ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার পরে ওই দিন রাতে সুরমান আলি বর্ধমান থানায় গোলামের বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, অসমের চা নানা জায়গায় সরবরাহ করার জন্য শক্তিগড়ে একটি গুদাম তৈরি করেছেন তিনি। শনিবার বিকেলে জনা দশেক যুবক তাঁর কাছে গিয়ে দাবি করেন, গোলাম জার্জিস তাঁদের পাঠিয়েছেন। ওই এলাকায় চায়ের ব্যবসা করতে হলে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে, নইলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। সুরমান নিজেও দাবি করেন, ‘‘আমি এর প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করে হুমকি দিয়ে চলে যায় ওই যুবকেরা। শুধু আমি নয়, গোটা শক্তিগড় এলাকাই গোলাম জার্জিসের এমন আচরণে অতিষ্ঠ।’’ এরপরেই বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন তিনি। তার আগে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস-সহ কলকাতার বেশ কয়েকজন নেতাকেও বিষয়টি জানান।

গোলাম জার্জিসও একাধিক অভিযোগ তোলের সুরেমানের নামে। তাঁর দাবি, শক্তিগড়ে দলের সংগঠন শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করিয়েছেন তাঁরাই। তাতে ফাটল ধরাতে এই ধরনের মিথ্যে অভিযোগ করছেন সুরমান। জার্জিসের অভিযোগ, ‘‘চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছিল বলে জনতা ওঁকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেছিল। এখন আবার এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার পরিজনদের গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দিচ্ছে সুরমান। আমিও দলীয় নেতৃত্ব ও পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।

মঙ্গলবার বিধানসভায় দু’জনকেই ডেকে পাঠান দলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। সেখানে গোলাম জার্জিসকে সাফ জানানো হয়, কর্মাধ্যক্ষের পদ তাঁকে ছাড়তে হবে। তারপরেই সুব্রত বক্সীর ফোন যায় সভাধিপতির কাছে। নির্দেশ যায় সুরমান আলির কাছেও। দলের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেন, “আমরা ব্লক স্তর থেকে রিপোর্ট পেয়েছি। জেলা পুলিশের কাছ থেকেও রিপোর্ট পেয়েছি। দুটি রিপোর্টেই গোলামের নামে ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে। তারপরেই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, দল কিন্তু গোলামকে কর্মাধ্যক্ষ পদটি কেড়ে সতর্ক করে দিল। এরপরেও না শোধরালে ওর জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।”

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, অরূপবাবু জেলা পর্যবেক্ষক হওয়ার পরে কোর্ট কম্পাউন্ড রোডে একটি বিয়েবাড়িতে দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে জমি-সংক্রান্ত একটি ঘটনা তুলে গোলাম জার্জিসকে সতর্ক করে দিয়েছিল অরূপবাবু।

কী রয়েছে ওই রিপোর্টে?

জানা গিয়েছে, তোলাবাজির অভিযোগের আগে সুরমান আলিকে রাস্তায় মারধরের অভিযোগ ছিল গোলামের নামে। এ ছাড়াও ভুয়ো নথি দেখিয়ে এক ব্যক্তিকে জমি বিক্রি করার অভিযোগে নির্বাচনের আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বর্ধমান জেলা আদালত। তার সঙ্গে রয়েছে পাট্টা দেওয়া জমি দখল করে পঞ্চায়েতের বাণিজ্যিক ভবন তৈরির অভিযোগ। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। আদালতের নির্দেশে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেখানে তাঁরা অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ভাইকে সামনে রেখে গোলাম জার্জিস ফল ঘোষণার পর থেকে একের পর এক জমিতে তৃণমূলের পতাকা পুঁতে দখলের চেষ্টা করছিল। গোটা এলাকা সন্ত্রস্ত করে তুলছিল। ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের একাংশ এ নিয়ে আমাদের কাছে ও তৃণমূলের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। এ ছাড়াও বর্ধমান উত্তর বিধানসভার মধ্যে গোলাম জার্জিসের নিজের পঞ্চায়েত হেরে যাওয়াটাও দল ভাল চোখে দেখেনি।”

Gulam Jarjis Councilor Post
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy