এক সময়ের কাছের কৃষকেরা এখন অনেক দূরে। কৃষক সংগঠনও কালক্রমে শক্তি হারিয়েছে। তার মধ্যেও ‘চাষের জেলা’ পূর্ব বর্ধমানে ফের জমি বাঁচাও আন্দোলন, ১০০ দিনের কাজের দাবি থেকে শুরু করে ‘কৃষক ঐক্যমঞ্চ’ গড়ে নানা আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে বামেরা। কৃষকদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টায় নেমেছে সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষকসভা। ১৬ বছর পরে ফের কৃষকসভার রাজ্য সম্মেলন হতে চলেছে আগামী ৭-৯ নভেম্বর বর্ধমান শহরে।
কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “সাংগঠনিক কাঠামোকে মজবুত করাই লক্ষ্য। আমাদের কথা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা মনে করছি, কৃষকেরা ফের আমাদের সঙ্গে আসছেন। সে কারণেই ১০০ দিনের কাজের দাবি নিয়ে বিভিন্ন ব্লকে বড় জমায়েত হয়েছে। সেখানে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।” জেলা কৃষকসভার দাবি, মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার, বর্ধমান-সহ পাঁচটি জেলা কৃষকসভার রাজ্য সম্মেলনের দাবিদার ছিল। পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব প্রমাণ করেছেন, টানা আন্দোলনের মাধ্যমে চাষিদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার ঘটানো এবং তাঁদের অনেক দাবি মেটানো সম্ভব হয়েছে এই জেলায়। তার পরেই ঠিক হয়, ‘চাষের জেলায়’ জেলা সম্মেলন করে ঘুরে দাঁড়ানোর নীল নকশা তৈরি করবে কৃষকসভা। তবে একদা বামেদের শক্তঘাঁটি বর্ধমানে চাষিদের মনে কৃষকসভা দাগ কাটতে পেরেছে কিনা, পরের বিধানসভা
ভোটেই তা স্পষ্ট হবে।
রায়না-খণ্ডঘোষ গোবিন্দভোগ ধান চাষের জন্য বিখ্যাত। কৃষকসভার দাবি, এখানকার সুগন্ধী ধান বিদেশে পাঠিয়ে কেন্দ্র সরকার রাজস্ব আদায় করে। অথচ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধানের ক্ষতির পরেও রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার কৃষকদের সাহায্য করেনি। ধানের দাম নিয়ে ‘ফাটকা’ কারবার চলছে। সুগন্ধী চালের ব্যবসায়ী, চালকলের মালিক ও চাষিরা দোলাচলে রয়েছেন। অমলের কথায়, “কোনও ফসলেরই দাম মিলছে না। চাষিরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপিতে ধান বিক্রি করতে পারেন না। আলু চাষেও ক্ষতি হচ্ছে। হিমঘরে আলু রেখে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না।” ‘কৃষক ঐক্যমঞ্চ’ বা ‘নাগরিক মঞ্চ’ গড়ে জেলার নদী বাঁচানো, দূষণের প্রতিবাদেও আন্দোলন করছে কৃষকসভা। জেলা কৃষকসভার দাবি, বর্ধমান ২ ব্লকে কৃষকেরা টানা এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করেছিলেন। তাতে পঞ্চায়েতে তালা পড়েছিল। জামালপুরের নবগ্রাম, খণ্ডঘোষের শশঙ্গাতে পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও থেকে শুরু করে কাটোয়ার জগদানন্দপুরে রাস্তা সংস্কারের আন্দোলন মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল। জামালপুর, গলসি ১ ব্লকে আন্দোলনেও প্রচুর মানুষ হাজির হন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেলার উপর দিয়ে নতুন জাতীয় সড়ক তৈরি হচ্ছে। জমির দামবৃদ্ধির জন্য কৃষকসভার নেতৃত্বে মঞ্চ গঠন করে আন্দোলন চলছে। তাতে তৃণমূলের অনেকেই যোগ দিয়েছেন।” কৃষকসভার দাবি, রাজ্য সম্মেলনে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। অর্থ সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা কৃষকসভার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিনোদ ঘোষ বলেন, “প্রতিটি শাখা থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে, তাতে জনভিত্তি বাড়ার লক্ষণ স্পষ্ট।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)