Advertisement
E-Paper

ঘুরে দাঁড়াতে অস্ত্র এ বার ডিপিএল

পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাড়া মিলেছে। এ বার শহরে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে ডিপিএলের বিপর্যস্ত অবস্থাকে হাতিয়ার করল সিপিএম। ‘ডিপিএল বাঁচাও, দুর্গাপুর বাঁচাও’ স্লোগান তুলে রবিবার বিকেলে মিছিল করল সিপিএম। তবে শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে এই আন্দোলন নয়, তা বোঝাতে অন্য নানা রাজনৈতিক দলকেও ডিপিএল নিয়ে কর্মসূচিতে সামিলের আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিপিএম নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৩
ডিপিএল কলোনিতে মিছিল। রবিবার বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

ডিপিএল কলোনিতে মিছিল। রবিবার বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাড়া মিলেছে। এ বার শহরে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে ডিপিএলের বিপর্যস্ত অবস্থাকে হাতিয়ার করল সিপিএম। ‘ডিপিএল বাঁচাও, দুর্গাপুর বাঁচাও’ স্লোগান তুলে রবিবার বিকেলে মিছিল করল সিপিএম। তবে শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে এই আন্দোলন নয়, তা বোঝাতে অন্য নানা রাজনৈতিক দলকেও ডিপিএল নিয়ে কর্মসূচিতে সামিলের আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিপিএম নেতারা।

এক সময়ের সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি দুর্গাপুরে এখন দু’টি বিধানসভা আসনই তৃণমূলের দখলে। পুরসভার ৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ১১টি বামেদের হাতে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়াতে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে সিপিএম। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পুরভোটের ‘শিলিগুড়ি মডেল’ দেখে উজ্জীবিত হয়ে এই শহরেও বেহাল পুর পরিষেবা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল তারা। সই সংগ্রহ অভিযানে নেমে সাড়াও মিলেছে যথেষ্টই। পুরসভার সামনেও জমায়েত করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে সিপিএম। এর পরে এ বার তারা সরব হল ডিপিএলের পরিস্থিতি নিয়ে।

রবিবার ডিপিএল লাগোয়া গ্যামন ব্রিজ থেকে মিছিল করে সিপিএম। ডিপিএল কলোনি ঘুরে তা শেষ হয় কার্ল মার্কস ভবনে। এ দিন দলের পতাকা নিয়েই মিছিল হয়। তবে শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে এই আন্দোলন, সে কথা মানতে নারাজ দলের নেতারা। দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকারের বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুরের মানুষের স্বার্থে এই আন্দোলন চলছে। আমরা সর্বস্তরের মানুষকে তাতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বাকি রাজনৈতিক দলগুলিকেও যোগ দিতে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

গত কয়েক বছর ধরেই খুঁড়িয়ে চলছে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা ডিপিএল। সংস্থা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত তিন বছরে একমাত্র ওয়াটার ওয়ার্কস বিভাগ প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা লাভ করেছে। সংস্থার প্রধান বিভাগ পাওয়ার প্ল্যান্ট এই তিন বছরে লোকসান করেছে প্রায় ৫৯৩ কোটি টাকা। কোকওভেন প্ল্যান্টে তিন বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। কারিগরি ও বয়স জনিত কারণে ডিপিএলের প্রথম ছ’টি ইউনিট বন্ধ। মাঝে বেশ কিছু দিন উৎপাদন বন্ধই ছিল ডিপিএলে। তখন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কিনে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল সংস্থা। সম্প্রতি কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কোকওভেন প্ল্যান্টের একমাত্র চালু পঞ্চম ব্যাটারিটিও। তবে মাসখানেক আগে তিনশো মেগাওয়াটের সপ্তম এবং আড়াইশো মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিট একযোগে উৎপাদন শুরু করায় উৎপাদনের পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় সপ্তম ইউনিটের স্যুইচ ইয়ার্ডে সরবরাহ ব্যবস্থায় গণ্ডগোল হয়। তার জেরে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ ফেরে।

সিপিএম নেতাদের দাবি, শহরের বহু কারখানা এবং সিটি সেন্টার-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা ডিপিএলের বিদ্যুতের উপরে নির্ভরশীল। তাই এই সংস্থায় অন্ধকার নেমে এলে তা শহরের পক্ষে ভাল হবে না। তাঁদের অভিযোগ, ডিপিএল একেবারে বন্ধ করে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি দুর্গাপুরের সহকারী শ্রম কমিশনারের দফতরে কোকওভেন প্ল্যান্টের পরিস্থিতি নিয়ে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম। কোকওভেন প্ল্যান্টের উৎপাদন শিল্প আইন মেনে বন্ধ করা হয়েছে কি না, বিভাগের স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের কর্ম নিরাপত্তা নিয়ে ডিপিএল কী ভাবছে, তা খতিয়ে দেখার আর্জি জানানো হয়। শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ জুলাই সহকারী শ্রম কমিশনার এ চক্রবর্তী ডিপিএল কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃণালকান্তি মৈত্রের সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

সিপিএমের ডাকে তাঁরাও ডিপিএল নিয়ে আন্দোলনে সামিল হবেন কি না, সে প্রশ্নে কংগ্রেস নেতা তথা ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘আজই আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব শ্রমিক সংগঠন এক জোট হয়ে ডিপিএল বাঁচাতে উদ্যোগী হলে আমরা যোগ দেব।’’

সিপিএমের এই আন্দোলনকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের দুর্গাপুরের নেতা তথা আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কোকওভেন প্ল্যান্টে ব্যাটারি সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তা দ্রুত চালুর আর্জি জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মীদের কাজের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সিটুর জঙ্গিপনায় বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন এ সব অহেতুক নাটক করছে ওরা।’’

DPL issue CPM Durgapur bardhaman CITU Rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy