ঘটনার পরে বাড়ির সামনে জটলা। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি বন্ধ মাসখানেক। অথচ, চাবি যাঁর কাছে, তিনি দেখতে পান, বাড়ির মূল গেটের সামনেই তোয়ালে পড়ে। আর তা দেখেই সন্দেহ হওয়ায় খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে বেশ কিছু জিনিস। এই ঘটনার পরে পুলিশের অনুমান, দুর্গাপুরের ৫৪ ফুট রোডের আনন্দপুরী এলাকার ওই তালাবন্ধ বাড়িটি আসলে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল দুষ্কৃতীরা।
আনন্দপুরী এলাকার ওই বাড়ির মালিক হরনারায়ণ ঘোষ মাস খানেক আগে মারা গিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পরে এক ছেলে অসীমবাবু মাকে বেঙ্গালুরুতে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছেন। তার পরে থেকেই বাড়িটি তালাবন্ধ। বাড়ির বাগানের গেটের একটি চাবি থাকে আনন্দপুরী কো-অপারেটিভ হাউসিং সোসাইটির ‘কেয়ারটেকার’ পবন রুইদাসের কাছে। বিদ্যুৎ বিলের ‘মিটার রিডিং’ দেখার জন্য পড়শি কেয়া চক্রবর্তীর কাছে বাড়ির একটি চাবি দেওয়া আছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাগান দেখাশোনা করতে গিয়ে মূল ফটকের সামনে একটি তোয়ালে দেখতে পান পবনবাবু। তিনি কেয়াদেবীকে খবর দেন। কেয়াদেবী গিয়ে দেখেন, বাড়ির মূল দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। দু’জনেরই সন্দেহ হয়, বাইরের কারও ওই বাড়িতে আনাগোনা রয়েছে। কেয়াদেবী ফোন করে অসীমবাবুকে ঘটনার কথা জানান। বাড়ির পিছনের দিকে গিয়ে তিনি দেখেন, একটি দরজা সামান্য খোলা। তিনি নিশ্চিত হন, কেউ না কেউ বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিল। সমবায়ের অন্য সদস্যরা আসেন। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, আলমারি ভাঙা, সব লন্ডভন্ড করে ছড়ানো রয়েছে। ভিতরে মশা তাড়ানোর ধূপের একাংশ, বিড়ির টুকরো, নোংরা বালিশ, বিছানা পড়ে রয়েছে। একটি বড় এলইডি টিভি ও গয়না ভর্তি ব্যাগও রয়েছে সেখানে। অসীমবাবু ফোনে জানান, টিভি ও গয়না তাঁদের নয়।
আর দেরি করেননি তাঁরা। খবর দেওয়া হয় ফরিদপুর ফাঁড়িতে। পুলিশ এসে টিভি, মোবাইল, ক্যামেরা, গয়না ভর্তি ব্যাগ, বেশ কিছু জামাকাপড়, তালা ভাঙার হাতুড়ি-সহ কিছু সামগ্রী উদ্ধার করে নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বেশ কিছুদিন ধরেই গোপনে ওই বাড়িতে দুষ্কৃতীরা আসা-যাওয়া রয়েছে। তবে পড়শিরা জানান, রাতে কেউ ওই বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখেননি। পুলিশের অনুমান, কারও যাতে সন্দেহ না হয় তার জন্য রাস্তা ও লাগোয়া বাড়ির আলো সম্বল করেই কাজ চালিয়ে নিত দুষ্কৃতীরা।
ওই বাড়ির পাশেই থাকেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নীলরতন দে। তিনি বলেন, ‘‘রাতে আমি কোনওদিন ওই বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখিনি। তার মানে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দুষ্কৃতীরা আসা-যাওয়া করত। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’ সমবায় আবাসন সোসাইটির চেয়ারম্যান পিনাকীরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। এমন জনবহুল এলাকায় দুষ্কৃতীরা এ ভাবে ঘাঁটি বানিয়েছিল, ভাবতেই পারছি না! পুলিশ নিয়মিত টহলদারির আশ্বাস দিয়েছে।’’
পুলিশ জানায়, আবাসন সোসাইটিকে সমস্ত তালাবন্ধ বাড়ির তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই সব বাড়িতে রাতে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘টিভি, গয়না-সহ অন্য সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। ওই বাড়িতে দুষ্কৃতীরা ঘাঁটি গেড়ে চোরাই সামগ্রী মজুত করেছিল। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তদন্ত শুরু হয়েছে। তালাবন্ধ বাড়িগুলিতে গোপনে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy