পুজো থেকে দীপাবলি হয়ে ছটপুজো। শব্দবাজি আর ডিজের দাপট অব্যাহত জেলায়। অসুস্থ হয়ে পড়ছে কুকুর, বেড়ালরা। গত কয়েক বছর ধরে বর্ধমানে কুকুর বা বেড়াল পোষার প্রবণতা বাড়ছে। পোষ্যদের জন্য তৈরি হয়েছে বেশ কিছু পশু ক্লিনিকও হাসপাতাল। বেশ কয়েকটি পশুপ্রেমী সংস্থাও সারমেয়দের কল্যাণে কাজ করে চলেছে। তাদের দাবি, শব্দবাজি এবং ডিজের দাপটে পথকুকুর ও বেড়ালদের অবস্থা এ বার খুবই খারাপ।
এ বছর পুজোর সময়ে শব্দের দাপট অনেক কম ছিল। গত কয়েক দিনে চিত্রটা উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। বর্ধমানের ঘোড়দোড়চটি বা মুচিপাড়ার দু’টি বেসরকারি প্রাণী হাসপাতালে কয়েকশো গৃহপালিত পশুকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেগুলির মধ্যে কুকুর বেশি, বেড়াল কম। বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসক জাহাঙ্গির খান জানাচ্ছেন, বাজির বিকট শব্দে কুকুর ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। কুঁকড়ে যেতে পারে। শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। রয়েছে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও। কিছুক্ষেত্রে কুকুর অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। ভয়ে তারা নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। সেখানে অন্য কুকুরদের সঙ্গেসংঘাত হয়। অতিরিক্ত আওয়াজে কুকুরদের রক্তচাপ বাড়ে। সংখ্যায় কম হলেও খরগোশ ও পাখিও এতে আক্রান্ত হয়।
একটি পশু হাসপাতালের কর্ণধার বৈশাখী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রজাতির কুকুর আক্রান্ত হচ্ছে শব্দতাণ্ডবে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। মাথা গুঁজে পড়ে থাকছে সব সময়। হাসপাতালে আনতে হচ্ছে তাদের। এই সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভয় কাটাতে পোষ্যদের সঙ্গ দিতে হবে। সাহায্য করতে হবে।’’
প্রাণী প্রশিক্ষক ও পশুপ্রেমী অর্ণব দাস দীর্ঘদিন বিভিন্ন পশুপাখি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কুকুর খুব সংবেদনশীল। শব্দের কম্পাঙ্ক সহ্যসীমার বাইরে হলে এরা অস্থির হয়ে পড়ে। মালিক বা প্রিয়জনকে খোঁজে। আড়ালে বা খাটের নীচে চলে যেতে চায়। তীব্রতা বেশি হলে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। এমন হলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।’’
ব্যবসায়ী শান্তনু পাঁজার বাড়ি বর্ধমান হাসপাতালের পাশেই। তিনি জানাচ্ছেন, শব্দবাজির তাণ্ডবের জেরে বাড়ির কুকুরটিকে নিয়মিত উদ্বেগ কমানোর ওষুধ খাওয়াতে হচ্ছে। শহরের ‘পেট শপ’গুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, উদ্বেগ কমানোর সবচেয়ে প্রচলিত ওষুধগুলি আসতে না আসতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন প্রজাতির কুকুর আক্রান্ত হচ্ছে শব্দ-তাণ্ডবে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। হাসপাতালে আনতে হচ্ছে তাদের। এই সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভয় কাটাতে পোষ্যদের সঙ্গ দিতে হবে। সাহায্য করতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)