বিপজ্জনক: ঝোপঝা়ড়ে ঢেকে থাকা এই সব পরিত্যক্ত খনিমুখ নিয়েই ক্ষোভ। আসানসোলে এই খাদানে কিছু দিন আগে উদ্ধার হয় এক যুবকের দেহ। ছবি: পাপন চৌধুরী
কখনও কাউকে খুন করে বস্তায় ভরে দেহ ফেলে রেখে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। আবার কেউ অন্ধকারে বুঝতে না পেরে পড়ে গিয়ে তলিয়ে যাচ্ছেন। মাসখানেকের মধ্যে এমন তিনটি ঘটনা ঘটেছে পরিত্যক্ত খাদানে। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে বহু। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এলাকায় চানক নামে পরিচিত এই পরিত্যক্ত খাদানগুলি এ ভাবেই মরণকূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেগুলি দ্রুত ভরাট করা বা উঁচু পাঁচিলে ঘিরে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। ইসিএল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু এলাকাবাসীর একাংশের বাধায় কাজ শেষ করা যায়নি।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগে আসানসোল-রানিগঞ্জ এলাকায় কুয়োর মতো খাদান তৈরি করে কয়লা তুলত বেসরকারি নানা সংস্থা। সেগুলিকেই চানক বলা হয়। এমন অনেক খাদানই প্রায় চারশো ফুট গভীর। কয়লা তোলা শেষে সেগুলি মাটি-পাথর দিয়ে ঠিক ভাবে ভরাট করা হয়নি। বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে রেখে গিয়েছে ওই সব সংস্থা। পরে খাদানগুলি জলে ভরে গিয়েছে। সেগুলিই এখন ক্রমশ মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইসিএলের কর্তারা জানান, খনি এলাকায় এই রকম কয়েক হাজার খাদান রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে হিরাপুর, আসানসোল ও জামুড়িয়ায় এই রকম তিনটি চানক থেকে তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ৮ মে হিরাপুরের আলডিহির বাসিন্দা তাপস বাউড়িকে তাঁর দুই খুড়তুতো দাদা সম্পত্তির লোভে খুন করে আলডিহি গ্রাম লাগোয়া একটি চানকে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। চার দিন পরে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ মে আসানসোলের কালিপাহাড়ি ও ডামরার মাঝামাঝি এই রকমই একটি চানকে রাতের অন্ধকারে তলিয়ে যান শেখ সাজিদ। এক দিন পরে তাঁর দেহ মেলে। মে মাসের শেষ দিকে জামুড়িয়ার বাসিন্দা সরিতা গোপকে খুন করে তাঁর দেওর ছোটু গোপ নিউ সাতগ্রামের একটি চানকে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরপর এমন ঘটনায় পরিত্যক্ত খাদানগুলি ভরাট অথবা উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রাখার দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তৃণমূলের খনি শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহের বক্তব্য, ‘‘অনেক সময় গবাদি পশুও এই খাদানগুলিতে তলিয়ে যায়। আমরা চাই সেগুলি ভরাট করা হোক।’’ আইএনটিইউসি-র খনি শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে অনেক আগেই দাবি তুলেছি। ইসিএল ভরাটের কাজ শুরুও করেছিল। জানি না কেন কাজ বন্ধ রেখেছে। আবার দাবি জানাব।’’ একই অভিযোগ সিটু নেতা তথা আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশোগোপাল চৌধুরীর। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছি।’’
খাদানগুলি নিয়ে চিন্তায় ইসিএলের আধিকারিকেরাও। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘আমরা অর্ধেকেরও বেশি ভরাট করেছি। সবই ভরাট করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজনের বাধায় সেই কাজ মাঝপথে বন্ধ করতে হয়েছে।’’
কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলকষ্টের সময়ে এই খাদানগুলিতে জমা জল তুলে ব্যবহার করেন কিছু বাসিন্দা। সে কারণে তাঁরা সেগুলি ভরাট করতে দিতে চাইছেন না। তবে পরিস্থিতি বুঝে ফের উদ্যোগ হবে বলে জানিয়েছেন নীলাদ্রিবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy