Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ডাম্পারে পিষে মৃত্যু মা-ছেলের

ঘটনার পরেই আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালান নবাবহাটের মোড়ের ট্র্যাফিক কার্যালয়ে। ঘরে রাখা সিগন্যাল ও চেয়ার ভেঙে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি শৌভিক পাত্র-সহ বর্ধমান থানার পুলিশকর্মীরা।

দুর্ঘটনার পরে যানজট জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনার পরে যানজট জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০০:০৭
Share: Save:

স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে মোটরবাইকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাচ্ছিলেন খণ্ডঘোষের কার্তিক ঘোষ। নবাবহাট মোড়ের কাছে সিউড়ি রোডে ওঠার জন্য বাঁক নিতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তখনই পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিন জনেই। নিমেষে বছর তিরিশের অপর্ণা ঘোষ ও আট বছরের বর্ষণকে পিষে দেয় একটি ডাম্পার। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কার্তিকবাবুকে।

ঘটনার পরেই আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালান নবাবহাটের মোড়ের ট্র্যাফিক কার্যালয়ে। ঘরে রাখা সিগন্যাল ও চেয়ার ভেঙে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি শৌভিক পাত্র-সহ বর্ধমান থানার পুলিশকর্মীরা। দুর্ঘটনার জেরে জাতীয় সড়কের দুটি লেন প্রায় আধ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। থমকে যায় বহু গাড়ি। পুলিশ গিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাইক উদ্ধার করে জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, জাতীয় সড়কের ডিভাইডারে থাকা ‘কাটিং’ দিয়ে মোটরবাইক ঘোরানোর জন্য রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েছিলেন খণ্ডঘোষের ওয়ানিয়া গ্রামের ওই ব্যক্তি। কার্তিকবাবুর মাথায় হেলমেট থাকলেও তাঁর স্ত্রী ও ছেলের মাথায় ছিল না। প্রশ্ন উঠছে, বিপদের জন্য দায়ী কি অসাবধানতা।

পুলিশ জানিয়েছে, বর্ষণের পেটের উপর দিয়ে আর অপর্ণাদেবীর পায়ের উপর দিয়ে ডাম্পারটি চলে যায়। প্রাথমিক ভাবে ধারণা, রক্তক্ষরণেই মা ও ছেলে মারা গিয়েছেন। তবে কার্তিকবাবু রাস্তার ধারে পড়ায় তেমন চোট লাগেনি। অনাময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কার্তিকবাবুর এক ভাই রাহুল ঘোষ বলেন, “পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটতে ছুটতে অনাময়ে আসি। দাদা প্রচন্ড ভেঙে পড়েছেন। শুধু বলছেন, রাস্তার ধারে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। একটি গাড়ি ধাক্কা মেরে চলে গেল।’’ ওয়ানিয়া গ্রাম যে পঞ্চায়েতের অন্তর্গত, সেই শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সৈফুদ্দিন চৌধুরীও জানান, কার্তিকবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাস্তা পার হওয়ার জন্যই দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুড়শ্বশুরের শরীর খারাপের খবর পেয়ে ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাতারের মহাচান্দা পঞ্চায়েতের তরা রথতলায় যাচ্ছিলেন কার্তিকবাবু। তখনই এই ঘটনা ঘটে। সেখানকার বাসিন্দা তন্ময় ঘোষ বলেন, “জামাইবাবু পেশায় মুরগির মাংস বিক্রেতা। নিজের শ্যালককেও এই পেশায় নামিয়েছিলেন তিনি। দিদি ও ভাগ্নের মৃত্যুতে সবাই খুব ভেঙে পড়েছে।’’ খবর শুনে ওয়ানিয়া গ্রামে আসেন অপর্ণাদেবীর বৃদ্ধ বাবা সুকুমারবাবু ও মা কৃতিবালাদেবী। তাঁদের কথায়, “নাতির মুখটা খালি ভেসে উঠছে। ছেলেটাকে নিয়ে মেয়ের কত স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেল।’’

জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওয়াচ টাওয়ারের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গাড়িটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। খুব দ্রুত সেই গাড়িটিকে ধরে ফেলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Dumper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE