প্রতীকী ছবি।
গত দশ মাসে জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৪। তার মধ্যে ১৯০ জনই আক্রান্ত হয়েছেন পুজোর পরে। এই রিপোর্ট দেখে মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের। শুধু শহর নয়, গ্রামীণ এলাকাতেও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকায় তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
এ দিন বর্ধমানের নানা এলাকা ঘুরে দেখেন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়-সহ প্রশাসনের কর্তারা। ৭, ১৪, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁদের কাছে নিকাশি ও সাফাই নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান কিছু বাসিন্দা। জেলাশাসক বলেন, ‘‘পুরসভাকে যেমন ব্যবস্থা নিতে হবে, বাসিন্দাদেরও তেমনই সচেতন হতে হবে। আমরা এ নিয়ে প্রচার চালাব।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, গলসি ১ ও পুর্বস্থলী ১ ব্লকে ডেঙ্গির প্রকোপ গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। চলতি বছরে গলসি ১ ব্লকে ১৭ জন ও পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ২৫ জনের রক্তে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। গত বছর মঙ্গলকোটে ১৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। এ বার ধরা পড়েছে ২১ জনের রক্তে। কাটোয়া ২ ব্লকে যা ছিল সাত জন, এ বার তা হয়েছে ১৩ জন। এ ছাড়াও গত বছরের থেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে রায়না ২ ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকেও। গত বারের থেকে কমলেও কাটোয়া ১ ব্লকে ১৯ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।
শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে কেন? স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, মঙ্গলকোটে ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষ ইটভাটা ও বালি খাদানে কাজ করতে আসেন। এ ছাড়াও কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকা মানুষ পুজো, ইদে গ্রামে ফেরেন। তাঁদের মধ্যেই ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা গিয়েছে। পূর্বস্থলীর দুই ব্লকেও অজানা জ্বর ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। বেশিরভাগ জনই হাসপাতালে আসার আগে ভাল হয়ে গিয়েছিলেন, তবু তথ্য না লুকোনোয় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের।
বেশ কয়েক বছর ধরে গলসি ১ ব্লক ছিল আসানসোল স্বাস্থ্যজেলার অধীনে। জেলা ভাগের পরে তা পূর্ব বর্ধমানে যুক্ত হয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার মন্তব্য, ‘‘গত বছর গলসিতে ডেঙ্গি বেশি ছিল না কম, সে রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই।’’ অন্য জায়গায় ডেঙ্গি হওয়ার পিছনে অবশ্য স্বাস্থ্যকর্তারা অপরিচ্ছন্ন জায়গা, জল জমা ও সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন। ওই স্বাস্থ্যকর্তার মন্তব্য, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছেন। তাই এখনও অজানা জ্বর বা ডেঙ্গির প্রকোপের খবর এলেই ছুটে যেতে পারছি।”
রায়না থেকে কাটোয়া, মঙ্গলকোট থেকে পূর্বস্থলী— সব প্রান্তেই নিকাশি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ বাসিন্দাদের। নিকাশি বেহাল থাকার জন্য নোংরা জল জমে থাকে, নিকাশির জল গিয়ে পড়ে পুকুরে। গরু ও মানুষ এক সঙ্গে স্নান করে, এমন দৃশ্যও দেখা যায়। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিগুলি কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলেও অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্লাব নিকাশি নালা, পুকুরপাড়ে ব্লিচিং ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগ বাসিন্দার অভিযোগ, মশার উৎপাত কমাতে স্বাস্থ্য দফতর ধোঁয়া দিচ্ছে বটে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। ঠিকমতো তেলও স্প্রে করা হয় না। ফলে, মশার উৎপাত কমছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ধোঁয়া দেওয়ার যন্ত্র রয়েছে তিনটি। কিন্তু যন্ত্রী রয়েছে এক জন। ফলে, ওই কর্মী সকালে মানকরে ছুটছেন, তো বিকেলে খণ্ডঘোষ। ফলে, সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy