জেলায় সব থেকে বেশি তাঁতশিল্পীর বাস কালনা মহকুমায়। সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামের তাঁতশিল্পের খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে। তাঁতের শাড়ির বাজার না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছে এই শিল্প। এ বার তাঁতশিল্পীদের তৈরি পণ্য অনলাইনে বিক্রির চেষ্টা চালাবে মহকুমা প্রশাসন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে কচুরিপানা থেকে তৈরি সামগ্রী, কিসান মান্ডিতে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর তৈরি জ্যাম, জেলি এবং নতুন গ্রামের কাঠের পুতুলের অনলাইন বিপণনেও উদ্যোগী প্রশাসন। মহকুমা প্রশাসনের দাবি, ১২ মে বিষয়টি নিয়ে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে।
২০১৭-র গণনা অনুযায়ী জেলায় তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজার। লাভের অঙ্ক কমায় কমতে থাকে তাঁতশিল্পীদের সংখ্যা। বন্ধ হয় অজস্র তাঁতঘর। বহু শিল্পী শাড়ি বোনা বন্ধ করে ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে যান। অনেকে হকারি, খেতমজুরি শুরু করেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, এখন কালনা মহকুমায় ১০ হাজার এবং কাটোয়া মহকুমায় হাজার চারেক তাঁতশিল্পী রয়েছেন। হ্যান্ডলুম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তাঁতশিল্পীরা রয়েছেন কালনা এবং কাটোয়া জোনের আওতায়। ১২ মে বৈঠকে ক্লাস্টারের সদস্য, তাঁত সমবায় এবং ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তাঁতশিল্প চালান এমন লোকজনদের ডাকা হয়েছে। মোট ৭০ জন প্রতিনিধি থাকবেন বৈঠকে। প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি থাকবেন অনলাইনে পণ্য বিক্রির ব্যবসায় সুনাম রয়েছে এমন একটি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
মহকুমা হ্যান্ডলুম আধিকারিক রঞ্জিত মাইতি জানিয়েছেন, কালনা মহকুমার টাঙ্গাইল, জামদানি এবং কাটোয়ার ওড়নার মতো সামগ্রী অনলাইনে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। অনেক তাঁতশিল্পী ইংরেজিতে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ নন। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অনলাইন ব্যবসা চালাতে সমস্যা হতে পারে। কোন পণ্যের চাহিদা কেমন, সে সম্পর্কে তথ্য তাঁতিদের জানানো হবে। কোনও পণ্য বিক্রি না হলে তাঁতিরা ফেরত নিতে পারবেন। হ্যান্ডলুম দফতরের এক আধিকারিক জানান, বছর খানেক আগে জামদানি শাড়ি জিআই তকমা পায়। তবে এখনও তাঁতিরা শাড়িতে জিআই ব্যবহার করতে পারছেন না। অনলাইনে ব্যবসা শুরুর আগে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নতুনগ্রামের শিল্পীরা বহু বছর ধরে কাঠের পুতুল তৈরি করে আসছেন। তাঁদের তৈরি কাঠের পেঁচার সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। নতুনগ্রামের এক শিল্পী রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে শুরু হয়েছে কচুরিপানা থেকে ব্যাগ, ফুলদানি-সহ নানা জিনিসপত্র তৈরির কাজ। এই ব্লকের কিসান মান্ডিতে টোম্যাটো, পেয়ারা, কুল দিয়ে জ্যাম, জেলি, আচার, কাসুন্দি তৈরি করেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা।
কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘প্রচুর মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেন। অনলাইনে বিক্রি হলে গোটা দেশের বাজার পাওয়া যাবে। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।’’ তিনি জানান, বৈঠকে থাকবেন একটি অনলাইন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কলকাতা, ওড়িশার তিন জন প্রতিনিধি। বেঙ্গালুরু থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এক ঝাঁক প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেবেন। সংস্থার প্রতিনিধিরা ছ’মাস ধরে ট্রেড লাইসেন্স, জিএসটি, প্যাকেজিং, রিটার্ন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)