Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Kali Puja 2021

অমাবস্যার রাতে পূর্ণচন্দ্র দেখালেন রাজাকে, ‘দুর্লভা কালী’ পুজো শুরু করেন গোকুলানন্দ

বর্ধমানের মহারাজ এক দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে দেখতে পান, তাল পাতার ছাউনিতে এক সন্ন্যাসী বসে সাধনা করছেন। সেই দিন ছিল অমাবস্যার রাত।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৩২
Share: Save:

৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও সমাধান হয়নি বর্ধমান শহর লাগোয়া লাকুড্ডিতে পূজিতা ‘দুর্লভা কালী’-র উপাসনা ঘিরে থাকা নানারকম রহস্যের। স্থানীয়রা বলছেন, ‘‘কখনও দুর্গা, কখনও চণ্ডী আবার কখনও বিপত্তারিণী রূপে পূজিতা হন তিনি।’’ কালীপুজোর দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এ বারেও পূজিতা হবেন দুর্লভা কালী। সেই সেজে উঠেছে মন্দির চত্ত্বর।

লোকশ্রুতি থেকে জানা যায়, বর্ধমানের মহারাজার উৎসাহে মা দুলর্ভার প্রতিষ্ঠা হয়। লোক মুখে শোনা যায়, একদা গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক সন্ন্যাসী ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গল ঘেরা লাকুড্ডিতে হাজির হন। শুরু করেন মা কালীর আরাধনা। এক দিন গোকুলানন্দ স্থানীয় পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে তাঁর পায়ে একটি পাথরে ঠেকে। তিনি ওই পাথর টিকে তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন। এক দিন মা দুর্লভা গোকুলানন্দকে স্বপ্নাদেশ দেন। তাকে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করতে বলেন।সন্ন্যাসী গোকুলানন্দ তার পরেই লাকুড্ডি জঙ্গলে মা দুর্লভার আরাধনা শুরু করেন। প্রথমে তালপাতার ছাউনি করে মা দুর্লভা কালীর আরাধনা শুরু করেন।

সেই পুজো শুরুর পর, বর্ধমানের মহারাজা এক দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে দেখতে পান, তালপাতার ছাউনিতে এক সন্ন্যাসী বসে সাধনা করছেন। সেটা ছিল অমাবস্যার রাত। ওই দিন গোকুলানন্দ বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাবকে তাঁর দৈবশক্তি দিয়ে অমাবস্যার রাতে পূর্ণচন্দ্র দেখিয়ে ছিলেন। মহারাজ মুগ্ধ হয়ে গোকুলানন্দকে দশ বিঘে জমি এবং একটি মন্দির তৈর করে দেন।কালী মন্দিরের পাশেই তৈরি করা হয় তিনটি শিব মন্দিরও।

তবে দেবীর নাম ‘দুর্লভা’ হওয়া নিয়ে একটি অন্য গল্প প্রচলিত আছে। বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরা জানান, গোকুলানন্দের দেহত্যাগের পরে দুর্লভ ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে নিয়োগ করেন রাজা বিজয়চাঁদ। পুরোহিত দুর্লভ ভট্টাচার্যের নামেই দেবী এখানে দুর্লভা কালী নামে পরিচিত। সেবায়েত মঙ্গল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দেবী এখানে শ্বেতপাথরের মূর্তিতে পূজিতা হন। তবে দেবীর মূর্তিটি প্রথমে মাটির ছিল। পরে তা অষ্টধাতুর তৈরি করানো হয়। সেই মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। এর পরে বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব বেল কাঠের মুর্তি তৈরি করে দেন। কিন্তু সময়ের ফেরে ওই বেলকাঠেও ঘুণ ধরে। এর পর ভট্টাচার্য পরিবারের তরফে সিমেন্টের দেবী মূর্তি তৈরি করা হয়। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে সিমেন্টের তৈরি মূর্তিতে ফাটল দেখা দেয়। তার পর রাজস্থান থেকে ভট্টাচার্য পরিবার শ্বেতপাথরের মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করে মা দুর্লভাকে।

দুর্গাপুজোর সময় চার দিন ধরে মা দুর্লভার পুজো হয়। তবে কালীপুজোর সময় রাতভর পুজো হয় এবং মন্দির চত্বরে ভক্তদের ভিড় হয়। ভক্তদের বসিয়ে ভোগ খাওয়ানো হয়। সেবায়েত মঙ্গল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বার কোভিড বিধি মেনেই পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE