আসানসোলে সম্প্রীতি আলোচনা। নিজস্ব চিত্র
মায়ের ক্যানসার ধরা পড়েছিল হঠাৎই। চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হিমসিম হতে হচ্ছিল। ভাল চিকিৎসার জন্য মুম্বইয়ে নিয়ে যেতে হয় মাকে। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনকে তখন সে ভাবে পাশে পাননি পশ্চিম বর্ধমানের নিয়ামতপুরের বাসিন্দা শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়। এগিয়ে আসেন এলাকার যুবক আনোয়ারুল ইসলাম। বাড়িয়ে দেন সব রকম সাহায্যের হাত।
ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালের কর্মী শতাব্দী পরে বিয়ে করেছেন আনোয়ারুলকে। যদিও তা সহজে হয়নি। এলাকার কিছু লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবু সমস্ত চোখরাঙানি উপেক্ষা করেছেন দু’জনেই। রবিবার আসানসোল আদালত লাগোয়া এক ভবনে এক আলোচনাচক্রে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শতাব্দী বলেন, ‘‘অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে করেছি, কখনও মনেই হয় না।’’ ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফর অ্যাসিস্ট্যান্স টু পিপল’ নামে এক সংগঠনের উদ্যোগে ও আসানসোলের ‘টিপু সুলতান মেমোরিয়াল সোসাইটি’র সহযোগিতায় ‘আপনার প্রতিবেশীকে চিনুন— মিলেমিশে বাঁচব’ শীর্ষক ওই আলোচনাসভায় এ দিন সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এমন কাহিনি শোনালেন অনেকেই। বার্তা দিলেন সাম্প্রদায়িক অশান্তি বন্ধের। আয়োজক সংগঠনের তরফে সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘এমন গোলমালের একমাত্র কারণ, আমাদের অজ্ঞতা।’’
শহরের এক স্কুলশিক্ষিকা ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী জানান, টিফিনের সময়ে তিনি সব ছাত্রছাত্রীর টিফিনবক্স খুলে খাবার এক জায়গায় করে দেন। সেখান থেকেই সকলে মিলে খায়। আর এক শিক্ষক জয়ন্ত চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সমাজে সম্প্রীতি রক্ষায় বড় ভূমিকা নিতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।’’
সমাজকর্মী জয়া মিত্র জানান, এই খনি শিল্পাঞ্চলে নানা সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি বাস বহু দিনের। খনিতে এক সঙ্গে কাজ করেন হিন্দু-মুসলিম শ্রমিকেরা। আপদে-বিপদে পরস্পরের পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘‘এখন যে বাতাবরণ তৈরি হতে দেখছি, তা কুৎসিত। আমাদের বন্ধুত্ব গড়তে হবে।’’ আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী ভারূপানন্দের বক্তব্য, ‘‘আমাদের স্বার্থপরতা ত্যাগ করতে হবে। প্রকৃত প্রতিবেশী হয়ে উঠতে হবে।’’ আসানসোলের এক গির্জার ফাদার অমিত তিরকি, ইমাম মহম্মদ সাইদুলদের বার্তা, সব ধর্মের লক্ষ্যই এক— মুক্তির পথ খোঁজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy