Advertisement
E-Paper

জাল নোট ছড়াতে ছক, কবুল ধৃতের

মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের ডিভিসি মোড় এলাকা থেকে বিভা দেবী ওরফে বিনীতা নামে বিহারের ওই মহিলাকে ৪টি জাল ১০০ টাকার নোট সমেত পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। আজ, সোমবার ধৃত মহিলাকে ফের বর্ধমান আদালতে তোলা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জাল নোট শব্দটা যেন জীবনে প্রথম বার শুনলেন! এমন ভাবেই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় উত্তর দিচ্ছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলা। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। দুঁদে পুলিশ অফিসারদের লাগাতার জেরার মুখে ভেঙে পড়ে কবুল করলেন, তিনি জাল নোটের ‘ক্যারিয়ার’ হিসাবে কাজ করেন।

মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের ডিভিসি মোড় এলাকা থেকে বিভা দেবী ওরফে বিনীতা নামে বিহারের ওই মহিলাকে ৪টি জাল ১০০ টাকার নোট সমেত পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। আজ, সোমবার ধৃত মহিলাকে ফের বর্ধমান আদালতে তোলা হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখে বারবারই ওই মহিলা দাবি করছিলেন, ‘আমি ও-সব ব্যাপারে কিছু জানি না। ১০০ টাকার নোট আবার জাল হয় না কি?’ কিন্তু, জাল নোট এল কোথা থেকে, তার কোনও সদুত্তরই দিতে পারছিলেন না। বর্ধমান থানার এক পুলিশ অফিসার বলেন, “টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই মহিলার কাছ থেকে আরও ১৬১টি ১০০ টাকার নোট মিলেছে। সবগুলোই জাল। ব্যাঙ্ক থেকে যেমন নতুন কড়কড়ে টাকা পাওয়া যায়, সে রকমই নোট ওই মহিলার কাছে মিলেছে। তিনটে সিরিজের একই নম্বরের টাকাগুলি।”

পুলিশের আরও দাবি, জেরার সময় বিনীতা জানায়, ঝোপের মধ্যে কিংবা রাস্তার ধারে ওই জাল নোটগুলি মিলেছে। কিন্তু, ওই সব জায়গায় পড়ে থাকলে টাকার উপর ময়লার আস্তরণ থাকত, নিদেনপক্ষে ধুলোও লেগে থাকত। কিন্তু, এই সব টাকাই তো চকচকে? এ বার জবাব, ‘পলিথিনের প্যাকেটে নোটগুলো মোড়ানো ছিল। টাকা হাতে নিয়েই পলিথিনটা ফেলে দিয়েছি’।

পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন ধৃত মহিলার বড় ছেলেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে আসে। পুলিশ জানতে পেরেছে, বড় ছেলের সঙ্গেই ওই প্রৌঢ়া বিহারের ছাপড়া থেকে বর্ধমানে এসেছেন। ছেলেকে দেখার পরেই মহিলা কিছুটা ভেঙে পড়েন। এবং জানিয়ে দেন, কী ভাবে ওই জাল টাকা তিনি পেয়েছেন। স্বীকার করে তাঁর মতো আরও কয়েক জন জাল নোটের ‘ক্যারিয়ার’। ওই টাকা বাজারে ছড়াতে পারলেই তাঁদের ‘আয়’ হয়। তাঁরা টাকা ‘কেনেন’ বিহারের এক এজেন্টের কাছ থেকে। তিনি ওই এজেন্টের কাছ থেকে ৬০০০ টাকা দিয়ে জাল নোটে ২০ হাজার টাকা কিনেছিলেন। পুরো টাকাটা চালাতে পারলে ১৪ হাজার টাকা লাভ হত। বর্ধমানে এসে উল্লাস মোড়ে এক ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন। মঙ্গলবার ডিভিসি মোড়ে এক দোকানে জিনিস কিনে ওই নোট দিতেই ব্যবসায়ীর সন্দেহ হওয়ায় ওই মহিলাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ বিনীতাকে গ্রেফতার করে।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, বিহারের একটি দল বর্ধমান, হুগলি সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। ধৃত মহিলাই এর আগে তিনবার বর্ধমান ঘুরে গিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাজারে ১০০ টাকার নোটের চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া, ৫০০-২০০০ টাকার নোটের মতো ১০০ টাকা কেউ চট করে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন না। ফলে দ্রুত ১০০ টাকার জাল নোট বাজারে ছড়াতে সুবিধা হয় ‘ক্যারিয়ার’দের। পুলিশ মনে করছে, বাংলাদেশ থেকে জাল নোট নিয়ে এসে মালদহের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম চৈরিঅন্তপুর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় পাচারকারীরা। মালদহের কাছেই বিহার-ঝাড়খণ্ড। এজেন্টদের মাধ্যমে ওই টাকা চলে যায় ‘ক্যারিয়ারদের’ কাছে।

মালদহ-সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা জাল নোটের কারবারের জন্য আগে থেকেই সিআইডি থেকে এনআইএ-র নজরে থাকায় ‘ক্যারিয়ার’রা এখন জাল টাকা নিয়ে বর্ধমানের মতো জেলা শহরে হানা দিচ্ছে। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, “১০০ টাকার জাল নোট নিয়ে বর্ধমান শহরেও ক্যারিয়াররা আস্তানা গড়ছে, যা চিন্তার বিষয়।”

Fake Note Accused বর্ধমান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy