বয়স মাত্র পাঁচ। তখনই নাকি দুই পুত্রসন্তান ছিল সরোজ মাঝির! ভোটার তালিকায় এই বিভ্রাট নিয়ে শোরগোল পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে। কী ভাবে অসম্ভব এই ঘটনা নির্বাচন কমিশনের দৌলতে সম্ভবপর হল, তা-ই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআরের জন্য এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে এই বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শোরগোল।
নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী, মঙ্গলকোট ব্লকের শীতল গ্রামের ১৭৫ নম্বর বুথের ভোটার সরোজ মাঝির বয়স ৬৩ বছর। অথচ একই তালিকায় তাঁর ছেলে হিসেবে নথিভুক্ত থাকা লক্ষ্মী মাঝি এবং সাগর মাঝির বয়স ৫৯ এবং ৫৮ বছর। অর্থাৎ, পাঁচ বছর বয়সেই বাবা হয়েছিলেন সরোজ!
শুধু বয়স বিভ্রাটই নয়, পরে জানা গিয়েছে, উক্ত দুই দুই ব্যক্তি আদতে সরোজের সন্তানই নন। তাঁরা নিজেরাই বলছেন, ২২ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। প্রথমে মুর্শিদাবাদে এবং পরে কাজের সূত্র ধরে পূর্ব বর্ধমানে যান। ২০০৬ সালে, বাম আমলে স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে নাকি তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয়।
সরোজের ‘ভুয়ো ছেলেদের’ মধ্যে এক জনের স্ত্রীর কথায়, ‘‘আমার শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশে। স্থানীয় সিপিএম নেতারা মঙ্গলকোটে আমাদের বাড়িতে এসে ভোটার তালিকায় নাম তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তখনই সরোজ মাঝিকে ‘বাবা’ হিসেবে দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করা হয়।’’ যদিও বয়সের এই মারাত্মক গরমিল সম্পর্কে তাঁরা কেউই জানতেন না বলে দাবি। বর্তমানে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আতঙ্কে ওই পরিবার।
ভোটার তালিকা অনুযায়ী, পাঁচ বছর বয়সে দুই সন্তানের জনক সরোজ জানান, তাঁর দুই পুত্র। কিন্তু তাঁদের নাম সুজিত মাঝি এবং অনুপ মাঝি। তিনি বলেন, “ওই দুই ব্যক্তি কী ভাবে আমার ছেলে হিসাবে ভোটার তালিকায় জায়গা পেল, সত্যিই জানি না। আমি অশিক্ষিত মানুষ। অত শত বুঝিও না।” সরোজের সত্যিকারের সন্তানেরা বলছেন, ভুয়ো নাম উঠেছে বামফ্রন্ট আমলে। এখন তার মাসুল দিতে হচ্ছে তাঁদের।
সংশ্লিষ্ট বিতর্কে এলাকার প্রবীণ সিপিএম নেতার দাবি, ‘‘বামফ্রন্টের সময় হলেও আমরা এই সব কাজ করিনি। ওরাই পূরণ করে নাম তুলেছিল। ভুল হয়ে থাকলে সেই সময়ের বিএলও দায়ী।” অন্য দিকে, তৃণমূলের খোঁচা, এই ঘটনা প্রমাণ করেছে বাম আমলেই বাংলাদেশিদের ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রাজ্যের ভোটার বানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছর ভোটার তালিকায় থাকা বাবা-ছেলের এই অস্বাভাবিক বয়সের ফারাক কমিশনের চোখেও পড়েনি কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ কথা বলছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম। তাঁর কথায়, ‘‘এর দায় তো কমিশনকেই নিতে হবে। কী করে এত বছর ধরে এই ভুলে ভরা তালিকা থাকল, কেন কমিশনের চোখে পড়ল না, এটাই বিস্ময়ের।’’ বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘এখন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে একে একে কেউটে বার হচ্ছে। ওই জন্যই প্রথম থেকে তৃণমূলের এসআইআর নিয়ে এত বিরোধিতা করছে। সিপিএম, তৃণমূল, দুই দলের জন্য বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর জায়গা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায়।’’