Advertisement
E-Paper

সুস্থ হয়েও ঠাঁই হাসপাতালে

দু’জনের বয়সের ফারাক অনেকটাই। দু’জন ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু দু’জনেরই বর্তমান ঘর— বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ওঁরা কালনার মিনা পাল আর বিহারের অনিতা শর্মা। দু’জনেই সুস্থ।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১৪
বাঁ দিকে, মিনা পাল ও ডান দিকে, অনিতা শর্মা। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, মিনা পাল ও ডান দিকে, অনিতা শর্মা। নিজস্ব চিত্র।

দু’জনের বয়সের ফারাক অনেকটাই। দু’জন ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু দু’জনেরই বর্তমান ঘর— বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ওঁরা কালনার মিনা পাল আর বিহারের অনিতা শর্মা। দু’জনেই সুস্থ। কিন্তু আত্মীয়রা খোঁজ-খবর না করায় হাসপাতালে থেকে এখনও বাড়ি ফেরা হয়নি।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ চত্বর। দেখা গেল, পাত্র হাতে ভিক্ষে চাইছেন ৬২ বছরের এক বৃদ্ধা। উনিই মিনা পাল। হাসপাতালের রেকর্ডে তাঁর বাড়ি, কালনার লিচুতলা। মাস তিনেক আগে অসুস্থ মিনাদেবীকে হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি করান ভাইঝি। সুস্থও হয়ে গিয়েছেন বেশ কয়েক দিন। কিন্তু ঠিকানা সেই— রাধারানি ওয়ার্ড।

প্রতি দিনের রুটিনটা কেমন ওই বৃদ্ধার? এক কর্মী জানান, দিনভর চেয়েচিন্তে জোগাড় করেন কয়েক টুকরো পাঁউরুটি আর এক গেলাস চা। সন্ধ্যে হলেই ঢুকে পড়েন চেনা ওয়ার্ডে। টেনে নেন এক কোণে পড়ে থাকা কালো রঙের ছেঁড়া জ্যাকেটটা। ওয়ার্ডে বসেই নিজের কথা বলতে থাকেন বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইঝি আর খোঁজ নেয় না। চায়ের জন্য ভিক্ষে করছি।’’— বলেই নিজের কপালে হাত দেন বৃদ্ধা। ওই ওয়ার্ডের এক জন নার্স বলেন, “উনি এখন মানসিক হতাশায় ভুগছেন।’’ পুলিশ জানায়, লিচুতলায় সন্ধান চালিয়েও ওই বৃদ্ধার বাড়ির খোঁজ মেলেনি।

অন্য জন অনিতা শর্মা। বাড়ি, বিহারের বাঁকা থানার দুনুয়া গ্রামে। তাঁর বর্ধমান মেডিক্যালে আসার পিছনে লম্বা ঘটনা রয়েছে। পুলিশ জানায়, দিল্লির পঞ্জাবি মহল্লার একটি পানশালায় কাজ করতেন অনিতা। এক বছর সেখানে থেকে আচমকা বাড়ির জন্য মন কেমন করায় চেপে বসেন হাওড়াগামী ট্রেনে। হাওড়ায় পৌঁছে ফের বাড়ি ফেরার ট্রেন। দিনটা ছিল ২৩ অক্টোবর। ট্রেন বর্ধমান স্টেশনে থামার পরেই বিপত্তি। জল খেতে নেমেছিলেন তিনি। আচমকা ট্রেন ছেড়ে দেওয়াই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রেল লাইনের ফাঁকে পড়ে যান। তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে আসা হলে একটি পা বাদ দিতে হয়। অনিতা এ দিন বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরেই জ্ঞান হারায়। তারপরে আর কিছু মনে নেই।’’

অনিতা বাড়ির ঠিকানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। তবে অনিতা সুস্থ হওয়ার পরেও তার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে লাভ হয়নি বলে জানান পুলিশ কর্তা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, ফোন নম্বর না থাকায় অনিতার বাড়ির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়নি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা অবশ্য বলেন, “দু’জনের ক্ষেত্রেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।” বর্ধমান জিআরপি-র ওসি দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই তরুণীর দুর্ঘটনার খবর সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়। পরে কী ঘটেছে, খোঁজ নিতে হবে।”

Burdwan Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy