Advertisement
E-Paper

চড়া সুদে ধার নিয়েই বিপদ, দাবি চাষিদের

রাধারমণ সরকার, সম্রাট রায় ও দিলীপ ঘোষ— তিন জনই জমি ঠিকা নিয়ে চাষ করেছিলেন। চাষের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রথম জন হদরোগে জমিতে পড়েই মারা যান। শেষ দু’জন আত্মঘাতী হন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০২:১৯

রাধারমণ সরকার, সম্রাট রায় ও দিলীপ ঘোষ— তিন জনই জমি ঠিকা নিয়ে চাষ করেছিলেন। চাষের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রথম জন হদরোগে জমিতে পড়েই মারা যান। শেষ দু’জন আত্মঘাতী হন।

ভাতারে পরপর তিন চাষির মৃত্যুর জন্য আপাত দৃষ্টিতে দফায় দফায় ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ‘দোষী’ মনে হলেও এর পিছনে আরও বড় কারণ রয়েছে বলে দাবি চাষিদেরই একাংশের। ভাতার-আউশগ্রাম-মঙ্গলকোটের বিভিন্ন প্রান্তের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চড়া সুদে মহাজনি ঋণ নিয়ে ঠিকাচাষের প্রবণতা চাষিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার মধ্যে কোনও কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সেটা সামলানোর ক্ষমতা থাকছে না চাষিদের।

যেমন, দিলীপ ঘোষ। ভাতারের কুলনগর গ্রামের ওই চাষির নিজস্ব জমি ৯ কাঠা। বাকি সাড়ে ১১ বিঘে ঠিকে নিয়ে চাষ করেছেন। জমি ভাড়া হিসেবে মালিককে বিঘে প্রতি ৬ মন ধান দিতে হতো দিলীপবাবুকে। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু পরে ভাই সুনীল ঘোষ বলেন, “বিপর্যয়ে পড়ে ধান দেওয়া সম্ভব নয়। এখন ওই ২০ বিঘার জমির ধান হিসেবে আনুমানিক ৭২ হাজার টাকা দিতে হবে। একদিকে, চাষের খরচের জন্য ধার। আরেক দিকে, জমির ভাড়া। এতেই ডুবেছি আমরা।’’

আর এক চাষি কবিরুল শেখও বলেন, “ভাগ চাষে জমির মালিককে অর্ধেক খরচ দিতে হয়। কিন্তু ঠিকা চাষে সব বিনিয়োগই চাষির। আবার সবটাই মৌখিক-চুক্তি।” ফলে, ঠিকা-চাষিরা কিসান ক্রেডিট কার্ড পান না, ব্যাঙ্ক থেকে চাষের জন্য ঋণও মেলে না। অথচ প্রশাসন জানে, চাষের সঙ্গে যুক্ত ২৫ শতাংশই এখন ঠিকা-চাষি। সেই সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। ঝুঁকি নিয়ে চাষের কারণ কী?

চাষিরা জানাচ্ছেন, ঠিকা নিয়ে বোরো চাষ করতে যাওয়া ফাটকা খেলার মতো। আবার ঋণ নিয়ে চাষ করতে গিয়েও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না চাষিরা। অথচ এই চাষিদের নিয়েই ‘জয়েন্ট লায়াবিলিটি গ্রুপ’ তৈরি করে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে পারে সরকার। ভাতারের বিধায়ক তথা বর্ধমান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির সদস্য সুভাষ মণ্ডলের কথায়, “মূলত খেতমজুররাই এখন ঠিকা চাষি হিসেবে উঠে আসছে। তাঁরা যাতে ব্যাঙ্কের সাহায্য পায় তার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আমাদের আমলে কোনও চাষিই চাষের কারণে আত্মঘাতী হয়নি।”

আর ভাতারের কৃষক নেতা নজরুল হক বলেন, “বামফ্রন্ট আমলে একটা স্থিতাবস্থা ছিল। সেটাই এখন ভেঙে চুরমার।”

Farmer Interest Loan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy