Advertisement
২১ মে ২০২৪
সিপিএম কর্মীর মৃত্যুতে থমথমে গ্রাম

টানা বোমাবাজি মঙ্গলকোটে

সকাল থেকেই একের পর এক বোমাবাজিতে থম মেরে রয়েছে গ্রাম। নিহত সিপিএম কর্মীর বাড়িতে কান্নার সঙ্গে মিশে গিয়েছে প্রাণের ভয়। গ্রামের বাজার-দোকান বন্ধ। রাস্তাঘাটও ফাঁকা। মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রামে যেন সকালেই আঁধার নেমেছে।

স্বামী হারিয়ে কান্না আরিফা বিবির। নিজস্ব চিত্র।

স্বামী হারিয়ে কান্না আরিফা বিবির। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৬:৪২
Share: Save:

সকাল থেকেই একের পর এক বোমাবাজিতে থম মেরে রয়েছে গ্রাম। নিহত সিপিএম কর্মীর বাড়িতে কান্নার সঙ্গে মিশে গিয়েছে প্রাণের ভয়। গ্রামের বাজার-দোকান বন্ধ। রাস্তাঘাটও ফাঁকা। মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রামে যেন সকালেই আঁধার নেমেছে।

মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো কুলশুনো দিঘির পাড় দিয়ে মোটরবাইকে চড়ে অফিস যাওয়ার সময়ে জনা ছয়েক ব্যক্তি হামলা চালান প্রবীণ সিপিএম কর্মী রফিকুল হাসান শেখের উপর। তখন ওই মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন ওই গ্রামেরই ইসমাইল শেখ নামে এক ব্যক্তি। হামলা চলে তাঁর উপরেও। লাঠি, শাবল নিয়ে আঘাত করা হয় দু’জনকে। মাথায়, মুখে আঘাত নিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁদের। বুধবার সকালে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়া হলে মারা যান রফিকুল হাসান। শোকস্তব্ধ বাড়িতে খবর পৌঁছনোর আগেই বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ওই গ্রাম থেকে ১৫-১৬টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন নিহতের ভাগ্নে কাজল শেখ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা নাজির শেখ-সহ ১৫ জনের নামে অভিযোগও করেছেন তাঁরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলের নাজির শেখ গোষ্ঠীর সঙ্গে সিপিএমের নিমাই ঘোষ গোষ্ঠীর (যার অন্যতম ছিলেন রফিকুল) লড়াই বেশ পুরনো। ২০০৯ সাল থেকেই বারবার ওই দুই গোষ্ঠীর গোলমাল দেখেছে কুলসুনো। গোলমাল লেগে রয়েছে মঙ্গলকোটের ন’পাড়া, লাখুরিয়া, চাকদা, ক্ষীরগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকাতেও। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। লড়াইয়ের কারণও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাম দখল। তৃণমূলের একাংশেরই দাবি, অনেক গোলমালেই মঙ্গলকোটের তৃণমূল ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামীদের দিকে আঙুল উঠছে। তাঁর অবশ্য দাবি, এ সব ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নয়। বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও বলেন, “মারধর,লুঠপাট করা দলের নীতি নয়। দল এ সব বরদাস্ত করবে না।” কিন্তু খুন, জখম, অশান্তি আর কত দিন চলবে, সে উত্তর দিতে পারেননি কেউই।

নিহতের স্ত্রী আরেফা বিবির অভিযোগ, সক্রিয় ভাবে রাজনীতি না করলেও সিপিএম ঘনিষ্ঠ ছিলেন উনি। দল করেই এই হাল হল।’’ পুলিশের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের গোলমাল সামলাতে পুলিশ এসেছে, যখন মানুষটা মার খেল তখন কোথায় ছিল পুলিশ?’’ রফিকুল হাসানের দুই মেয়ে হাজেরা ও রাবেয়াও বলেন, ‘‘নাজিরের লোকেরাই শেষ করে দিল বাবাকে।’’ মারধরের পরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযুক্ত নাজিরের যদিও দাবি, ‘‘পুরোটাই পারিবারিক বিবাদ।’’

তাহলে গ্রাম জুড়ে বোমাবাজি কেন, সে উত্তর অবশ্য মেলেনি। পুলিশ শুধু জানিয়েছে, গ্রামে টহল চলছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM TMC Blast Death Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE