Advertisement
E-Paper

প্রশ্নের মুখে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা

কোথাও অরক্ষিত অবস্থায় ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার। কোথাও আবার মান্ধাতা আমলের স্যুইচ বোর্ডেই চলছে কাজ। শুক্রবার প্রসূতি বিভাগের লেবার রুমের সামনে কন্ট্রোল প্যানেল বাক্স থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। কিন্তু তারপর শনিবারেও প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার বেআব্রু ছবিটা ধরা পড়ল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০০:৪১
(ডান দিকে) জরুরি বিভাগে পড়ে তার।  (বাঁ দিকে) মহিলা বিভাগে বেহাল এসি।

(ডান দিকে) জরুরি বিভাগে পড়ে তার। (বাঁ দিকে) মহিলা বিভাগে বেহাল এসি।

কোথাও অরক্ষিত অবস্থায় ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার। কোথাও আবার মান্ধাতা আমলের স্যুইচ বোর্ডেই চলছে কাজ। শুক্রবার প্রসূতি বিভাগের লেবার রুমের সামনে কন্ট্রোল প্যানেল বাক্স থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। কিন্তু তারপর শনিবারেও প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার বেআব্রু ছবিটা ধরা পড়ল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। শুধু তাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেল অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত ছাড়পত্রই নেই হাসপাতালের।

অগ্নিকান্ডের ঘটনা অবশ্য নতুন নয় এই হাসপাতালে। গত ছ’মাসে মোট চার বার অগ্নিকান্ড হয়েছে এই হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সকালে শিশু বিভাগে আগুন লাগে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই হাসপাতালের নতুন ভবনের এক তলায়, গত মাসে জরুরি বিভাগের তিন তলার বার্ন ওয়ার্ডে আগুন লাগে। এর আগে গত বছর ২৮ জুলাই শিশু বিভাগের দোতলায়, ২০১৪-র ২২ অক্টোবর নতুন ভবনের তিন তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। দমকল আধিকারিকরা জানান, ২০১১-র ১৭ জুলাই শিশু ওয়ার্ডের একটি স্যুইচ বোর্ড থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। তারপরে দমকলের তরফে অগ্নি নির্বাপণ জন্য মোট সাত দফা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কী কী নির্দেশ? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্পিরিট, এসি মেশিন, ওয়ার্মার, ব্লাড ব্যাঙ্ক, অপারেশন থিয়েটার থাকবে সেখানে বাধ্যতামূলক ভাবে অগ্নি নির্বাপক বসাতে হবে। মান্ধাতার আমলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাসপাতালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আগুন লাগলে প্রাথমিক ভাবে যাতে তার মোকাবিলা করা যায় সে জন্য হাসপাতালের সমস্ত বিভাগের দু’জন করে কর্মীকে দমকলের কাছ থেকে আগুন নেভানোর পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ফায়ার অ্যালার্ম ও স্মোক ডিটেক্টর বসানোও বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেন দমকল কর্তৃপক্ষ। গোটা ব্যবস্থা তৈরি হয়ে গেলে হাসপাতালকে দমকল দফতরের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার কথাও বলা হয়।

তবে হাসপাতালে আসা রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, নির্দেশই সার। শুক্রবারের অগ্নিকান্ডের পর শনিবারও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অরক্ষিত অবস্থায় ঝুলতে দেখা গিয়েছে তারের জঙ্গল। প্যানেল বাক্সগুলিরও ঢাকা নেই। শুধু তাই নয়, এসি মেশিনগুলিও বেহাল। পরিজনদের অভিযোগ, যে কোনও মুহূর্তে ওই যন্ত্রগুলিতে আগুন ধরে বড়সড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, শল্য বিভাগ, রাধারানি ওয়ার্ডে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও সেগুলির মেয়াদ বহু দিন আগেই পেরিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১-র আগুনের পর দমকল ও পূর্ত দফতর (বিদ্যুৎ) প্রায় ৩ কোটি টাকা একটি প্রকল্প যৌথ ভাবে তৈরি করে। সেই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই প্রকল্প নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি বলে দমকল আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ। এই অবস্থায় ফের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আবেদন জানানো হবে বলে দমকল সূত্রে খবর। দমকলের ওসি তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করতে বেশ কয়েক বছর আগে কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সব নির্দেশ বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসতে হবে।”

শুক্রবার প্রসূতি বিভাগে আগুনের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে প্রসূতি ও তাঁদের পরিজনদের মধ্যে। পুরো ওয়ার্ড জুড়ে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। পাঁচ তলার প্রসূতি বিভাগ থেকে নেমে আসার জন্য শুরু হয় হুড়োহুড়ি। এ দিনও ওই বিভাগে আতঙ্কের পরিবেশ লক্ষ্য করা গিয়েছে। বরানগরের বাসিন্দা কিরণমালা রায় বলেন, “পুত্রবধূ হাসপাতালে রয়েছে। আগ্নিকান্ডের পর ভয়ে ভয়ে রয়েছি।’’ আসানসোলের বাসিন্দা আনু খানের দাবি, ‘‘মেয়ে এখানে ভর্তি রয়েছে। মা ও শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।” বুধবার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জামালপুরের বেঁওরা গ্রামের মারিয়া খাতুন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই দিন কোনও রকমে ছেলেকে আঁচলের তলায় নিয়ে নীচের তলায় চলে এসেছি। বড় একটা ফাঁড়া কাটল যেন।’’

হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে নিজেদের অসহায়তা গোপন করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁর কথায়, “প্রকল্পের অনুমোদন মিলছে না দেখে প্রতিটি ওয়ার্ডে পাইপলাইনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে জলের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য পূর্ত দফতরকে (সিভিল) একটি রিপোর্ট তৈরির জন্য বলা হয়। দমকলের আঞ্চলিক দফতরের কর্তারা হাসপাতাল ঘুরে দেখে যান। সবই হয়েছে, কিন্তু বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও রিপোর্টটা তৈরি করানো গেল না।’’ তবে পুরনো আমলের খোলনলচে বদলানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি।

—নিজস্ব চিত্র।

fire extinguisher AC Medical college Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy