Advertisement
E-Paper

বিধি মেনে স্কুলে ফিরে পড়ুয়ারা খুশি

পড়ুয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ার পিছনে বামেদের হঠাৎ ডাকা হরতালকে ‘দায়ী’ করেছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪২
মাঠেই ক্লাস, পশ্চিম মঙ্গলকোটের একটি স্কুলে। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।

মাঠেই ক্লাস, পশ্চিম মঙ্গলকোটের একটি স্কুলে। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।

মুখ মাস্কে ঢাকা, তবু স্কুলে বন্ধুদের সামনাসামনি দেখার খুশি জানান দিল পড়ুয়াদের চোখ।

শুক্রবার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চালু হওয়ার প্রথম দিনে বামেদের ডাকা হরতাল থাকায় পড়ুয়াদের হাজিরা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে সমস্ত স্কুলেই পড়ুয়ারা এসেছে। স্কুলে ঢোকার মুখে হাতে স্যানিটাইজ়ার, থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থাও ছিল জেলার বেশির ভাগ স্কুলে। তার মধ্যেও বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলে ঘর অপরিচ্ছন্ন, আলোর ব্যবস্থা অপ্রতুল অভিযোগ করে ক্ষোভ জানান পড়ুয়া, অভিভাবকেরা। পশ্চিম মঙ্গলকোটের একটি স্কুলে আবার ক্লাস হয় মাঠে।

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, “বিকেল পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩৫ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলে এসেছিল। আশা করি, আগামী সপ্তাহ থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, পড়ুয়ারা স্কুলে আসবে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কানে আসেনি।’’

করোনা-কাঁটাকে সরিয়ে প্রায় ১১ মাস পরে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল খোলে এ দিন। পড়ুয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ার পিছনে বামেদের হঠাৎ ডাকা হরতালকে ‘দায়ী’ করেছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরা মনে করছেন, অনেক দিন পরে স্কুল খুলছে। করোনা-পরিস্থিতিও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। ফলে, অনেক অভিভাবক, পড়ুয়াদের মনেই সংশয় রয়েছে। তার উপর ধর্মঘটের কারণেও বাড়ি থেকে ছেলেমেয়েদের বার হতে দিতে চাননি অনেকে। সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫৮৯টি স্কুল খুলেছে। স্কুলগুলিকে কোভিড-বিধি প্রচার করার জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই টাকা দিয়ে স্কুল চলাকালীন নির্দিষ্ট সময় অন্তর জীবাণুমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দেখা দেওয়া পরিকাঠামোগত ত্রুটিগুলিও সারাতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ব্লক বা পুরসভার তরফে স্কুলে স্যানিটাইজ় করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আধিকারিক মৌলি সান্যাল বলেন, “কোনও পড়ুয়া মাস্ক না পড়ে স্কুলে এলে, সে যাতে স্কুল থেকে মাস্ক পায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

এ দিন বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের এক ছাত্রের হাতে মাস্ক তুলে দেন শিক্ষকেরা। কাটোয়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু রায়, ক্ষীরগ্রাম শ্রী যোগদ্যা বাণীপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ গুপ্তরা বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ শতাংশ পড়ুয়া এসেছিল। বিধি মানা হয়েছে।’’

কাটোয়া থেকে মেমারি, কালনা থেকে বর্ধমান শহরের স্কুলগুলিতেও পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্য সময়ের মতো দল বেঁধে সাইকেলে করে স্কুল যাওয়া, কিংবা দল বেঁধে এক সঙ্গে বাড়ি ফেরার চেনা দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। কালনা শহরের হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে এ দিন ১০০ জন ছাত্রী আসে। প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি সাহা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই ক্লাস হয়েছে।’’ সিমলন অন্নপূর্ণা কালী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক দেবনাথ শিকদার, মন্তেশ্বর মালডাঙা রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস পাত্রও জানান, করোনা ভাইরাসের ভয়ে কিছু অভিভাবক ছেলেমেয়েদের প্রথম দিন স্কুলে পাঠাননি। আশা করি এই পরিস্থিতি কেটে যাবে।

বর্ধমান বিদ্যার্থী ভবনের ছাত্রী মেঘনা ভট্টাচার্যের কথায়, “শক্তিগড় থেকে বাসে করে স্কুলে এসেছি। এতদিন পরে স্কুলে আসার মজাটা নষ্ট করতে চাইনি।’’ একই সুর ওই স্কুলের তৃষা যশ, তৃণী হাজরা, বর্ধমান মিউনিসিপ্যালের অরিজিৎ ঘোষ, রাজেশ দিঘরদের গলায়। তারা বলে, “বাড়িতে থেকে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। সে জন্য স্কুলে ছুটে এসেছি।’’ কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের ঈশ্বর বিশ্বাস,অনিকেত নাথেরাও স্কুলে এসে খুশি। আবার পড়ুয়াদের একাংশের গলায় আক্ষেপও ঝরে পড়ছে। একই ক্লাসে দূরে দূরে বসা, ভাল লাগেনি তাদের। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, স্কুল সবে খুলেছে। পুরোদমে স্কুল শুরু হলেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কোনও রকম সংশয় না রেখে অভিভাবকেরা পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠান, চাইছেন তাঁরা।

পশ্চিম মঙ্গলকোট জাতীয় শিক্ষা নিকেতনে পড়ুয়াদের দূরত্ব-বিধি মেনে স্কুলের মাঠে ক্লাস করতে দেখা যায়। সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, পঞ্চায়েত থেকে শ্রেণিকক্ষে জীবাণুনাশক স্প্রে করায় ঘর ভিজে ছিল। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য-বিধি মেনে এক সঙ্গে শতাধিক পড়ুয়াকে বসানোর মত বড় শ্রেণিকক্ষও নেই স্কুলে। সে কারণে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের মাঠে পড়ানো হয়, দাবি তাঁর।

Schools
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy