Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Heavy Rainfall

বন্যার সঙ্গে যুঝতে প্রস্তুতি, বাধল তরজাও

বন্যা পরিস্থিতি হলে, সেটার জন্য ব্যারাজের পলি না তোলা, না কি, অবৈধ ভাবে বালি তোলা, কোনটা দায়ী, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলে।

An image of barrage

পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। মঙ্গলবার। ছবি: পাপন চৌধুরী।

সুব্রত সীট ও সুশান্ত বণিক
দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৪
Share: Save:

টানা বৃষ্টির ফলে মাইথন, পাঞ্চেত জলাধার এবং দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে বিপুল পরিমাণে জল ছাড়া হচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে, নিম্ন দামোদর অববাহিকায় বন্যা-পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর সেই সূত্রেই নানা ব্যবস্থার কথা জানাচ্ছে প্রশাসন। পাশাপাশি, বন্যা পরিস্থিতি হলে, সেটার জন্য ব্যারাজের পলি না তোলা, না কি, অবৈধ ভাবে বালি তোলা, কোনটা দায়ী, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলে।

রাজ্যের সেচ দফতর জানাচ্ছে, আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দফতরের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন ঘোষ জানান, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার হার ৫০ হাজার কিউসেক ছাড়িয়ে গেলেই কোকআভেন থানায় রেডিয়োগ্রাম পাঠিয়ে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। সেখান থেকে সর্বত্র বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ দিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসার অঙ্গদপুর, আমলাজোড়, দুর্গাপুরের রাতুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ার অজয়ের পারের কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেই জন্য দুর্গতদের রাখতে স্কুলবাড়ি তৈরি রাখা হয়েছে। মজুত রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীও। আসানসোল রেলপাড় এলাকাও পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছে জেলা প্রশাসন। আলোচনা করা হয়েছে আসানসোল পুরসভার সঙ্গেও। পুরসভার অন্যতম ডেপুটি মেয়র ওয়াশিমূল হক জানান, গাড়ুইয়ের পারে থাকা লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। তেমন পরিস্থিতি হলে, বাসিন্দাদের সরানো হবে। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস পুন্নমবলম মঙ্গলবার বলেন, “উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

কিন্তু এই প্লাবন-আশঙ্কার মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। মঙ্গলবার দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শনে এসে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া অভিযোগ করেন, “নদীর মাঝ থেকে বালি তুলতে হবে। তা না করে নদীর দু’পাশে যন্ত্র দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। ফলে, নদীখাতের প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। নদীর পারে থাকা নিচু এলাকায় জল ঢুকছে। এই পরিস্থিতির জন্য বন্যাও হচ্ছে।” সাংসদের আরও অভিযোগ, বালি খাদানের ছাড়পত্র দেওয়ার পরে, প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত নজরদারি চালানো হয় না। ফলে, নির্দিষ্ট জায়গায় বালি না তুলে খাদান মালিকেরা নদীর সামনে থেকেই বালি তোলেন।

যদিও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, “সরকারি নিয়ম মেনে খাদান চালাতে হয় মালিকদের। নজরদারি চালাতে মাঝেমাঝেই অভিযান হয়।” এ দিকে, বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। দলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সাংসদ কিছু না জেনে কথা বলছেন। বন্যা পরিস্থিতির প্রধান কারণ হল ব্যারাজে পলি জমে জলধারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু বার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে পলি তুলে ব্যারাজের জলাধারের আয়তন বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত কিছু করেনি।”

২০২০-তে দুর্গাপুর পূর্বের তৎকালীন বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরে ব্যারাজ সংস্কারের জন্য চিঠি লিখে আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁকে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘নদী সংরক্ষণ ডিরেক্টরেট’ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, বিষয়টি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে। তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য বিষয়টি দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনকে (ডিভিসি) জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে সন্তোষ দাবি করেছিলেন, ব্যারাজ তৈরির সময়ে জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা ছিল ৬.১ মিলিয়ন ঘনমিটার। ডিভিসি-র ২০১১-র সমীক্ষায় দেখা যায়, পলি জমার কারণে তা হয়েছে, ৩.৩৯৭ মিলিয়ন ঘনমিটার। ২০২০-তে সেটা প্রায় ৫৯ শতাংশ কমে যায় বলে দাবি করেছিলেন সন্তোষ।

এমন আবহে, দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে ব্যারাজ সংস্কার শুরু করে রাজ্যের সেচ দফতর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পলি কে তুলবে, কী ভাবে তোলা হবে, তা নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্রের মধ্যে তরজা অব্যাহত। বিজেপি-তৃণমূল তরজা, সেই সূত্রেই বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heavy Rainfall flood Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE